দ্য ইনভিসিবল ম্যান


 


‘ইনভিসিবল ম্যান’ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আমার মনে হয়, যারা বই পড়তে ভালবাসে, সিনেমা দেখতে ভালোবাসে, অডিও স্টোরির পোকা --- তাদের অধিকাংশই কোন না কোনভাবে উপন্যাসটা পড়েছে, কিম্বা নাম শুনেছে, নিদেনপক্ষে গল্পটার বিষয়বস্তু জানে।

আমি ছোটবেলায় স্কুলের লাইব্রেরী থেকে নিয়ে বইটা পড়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিছুটা পড়ে ছেড়ে দিয়েছিলাম, ভালো লাগে নি। এবারও একই দশা হয়েছিল। তবে, ঐ, যাকে বলে বাঙালের গোঁ, বারে বারে দম নিয়ে ডুব দিলাম, এবং, অবশেষে উপন্যাসটা শেষ করলাম।

ধরে নিই, আসাদুজ্জামানের অনুবাদ অনুবাদ পূর্ণাঙ্গ। তাহলে, বলতে হবে, অন্তত প্রথম এগারোটা পর্বে ওয়েলস খাবি খেয়েছেন এই গ্রিফিন লোকটাকে নায়ক বানাবেন, না খলনায়ক বানাবেন তার সিদ্ধান্তে আসা নিয়ে। বারো পর্বে এসে যেই দেখলেন, একে অ্যান্টি হিরো বানানোরও দরকার নেই, একেবারে ভিলেনের ভিলেন, তস্য ভিলেন বানিয়ে ফেলা যেতেই পারে, মানে উপন্যাসটা সেটাই ডিমান্ড করছে, তখন নিশ্চিন্তে শুরু করলেন যাত্রা, এরপর আমার গল্পটা শেষ করতে লাগল --- মাত্র একটি রাত। দুই খেপে শেষ করলাম --- এক খেপ একবার সন্ধ্যাবেলায়, শেষ খেপ মধ্যরাত্রিবেলায়।

ওয়েলসের একটা বই আছে, মারাত্মক মোটা বই --- Outline Of History. সাংঘাতিক বই। এমন গোব্দা বই কেনার কথা ভাবিওনি কখনও। দামে পোষাবে না। এই বই প্রায় লাইব্রেরী কালেকশানের মতো। সভ্যতার ইতিহাসের কথা বিস্তৃতভাবে, প্রায় যতগুলো বিষয় আছে, ততগুলো বিষয় নিয়ে আর কেউ বলতে পেরেছেন? পারলেও মনে হয়, এইচ জি ওয়েলস এর পথিকৃৎ। ওয়েলস সাহেব যখন দেখলেন, এই বইটা সাধারণ মানুষের কাছে আড়েবহরে বিশাল হয়ে গেছে, তখন এর একটা ক্ষুদ্র সংস্করণ বানালেন, The Short History of The World. বইটা অসাধারণ। ওই বইটা থেকেই বোঝা যায় ওয়েলস সাহেব কি পরিমাণে বিজ্ঞানটাকে আয়ত্ত করেছিলেন।

ফলে, যতক্ষণ না বিজ্ঞানের সৌন্দর্যে আসা যাচ্ছে, ততক্ষণ ওয়েলস সাহেবের লেখনীর ক্যারিশ্মা বোঝা যাবে না। ১৯-তম পর্ব থেকে, মানে যতক্ষন গ্রিফিন আর কেম্পের সাথে কথপোকথন না আসছে ততক্ষন টেস্ট খেলেছেন চেতেশ্বর পূজারার মতোন। যেই অদৃশ্য মানব হওয়ার ব্যাখ্যায় এলেন, অমনি সূর্যকুমার যাদব হয়ে গেলেন, টি টুয়েন্টি এমন খেলতে শুরু করলেন তারপরে, যে একটা লাইনও বাদও দেওয়া যাচ্ছে না, বইটাকে ছেড়েও দেওয়া যাচ্ছে না।

‘অদৃশ্য মানব’ কনসেপ্টটাই এমন, যে দশকে দশকে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে বৈ কমেনি। ফলে ওয়েলস সাহেবের মাথার কোহিনূর এই উপন্যাস। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে মুগ্ধ করেছে অবশ্যই Outline Of History – কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন একটা কনসেপ্টকে পড়ানোর মুন্সিয়ানা রাখেন যে মানুষটা, তার সামনে নত হওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।

======================================

অদৃশ্য মানব

দ্য ইনভিসিবল ম্যান

এইচ জি ওয়েলস

অনুবাদকঃ আসাদুজ্জামান

সেবা প্রকাশনী

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা


Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে