নারী



 

“নারী আজন্ম এক রহস্যময়ী চরিত্র! কখনো তেজী, রুক্ষ। আবার কখনো শান্ত, শীতল। কখনো সাহসী ভয়-ডড়হীন যোদ্ধা। আবার কখনো ভীষণ আবেগী। নারী ভালোবাসা পেলে শান্ত নদী হয়ে যায়। ভালোবেসে শাসন করলে অবুঝ বাচ্চাটি হয়ে যায়। অবহেলা করলে হয়ে যায় রোদ্রতাপ কঠিন, অহংকারী। নারী সব পারে; নারী আগলে রাখে, অবহেলায় রাখে। নারী বরাবরই রহস্যময় চরিত্র। নারীকে আপনি যা দিবেন তা সে দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিবে, সেটা হোক ভালোবাসা কিংবা অবহেলা !”

লেখাটা মেহেদী হাসান শুভ্র-র। চিনি না তাকে। তবে কথাকটা ভাবালো। নারীকে রহস্যময়ীও বলছেন, আবার বলছেন, “নারীকে আপনি যা দিবেন তা সে দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিবে, সেটা হোক ভালোবাসা কিংবা অবহেলা!” তাহলে আর রহস্য কোথায়? সমস্ত সমাধানই কি হয়ে গেল না? বোধহয় কবিদের একটাই সমস্যা --- বাস্তবের নারীকে না মেনে নিতে পারার ব্যর্থতাবাস্তবের নারী এমন কিছু জটিলও নয় যে, তাকে রহস্যময়ী হতে হবে। আপন মনের মাধুরীটিকে সরালে অবশেষে একটা মানুষই সামনে এসে দাঁড়ায়। মানুষের পুরুষ-নারী ভেদ নেই। ডাক্তারের কাছে সবাই রোগী। পার্থক্য নেই।

জটিলতা আছে, সে কার না আছে? সাইকায়াট্রিস্টের কাছে নারী-পুরুষ দুজনেই যায় মানসিক জটিলতা সারাতে সেখানে কি সিলেবাস আলাদা ছিল, বা আলাদা স্পেশালিস্ট হয়? সেদিক থেকে পুরুষও কি রহস্যময় নয়? আসলেই দুজনের প্রকৃতি একটা জায়গায় এসে একটু আলাদা হয়। যেখানে স্থিতির কাজ, সেখানে বিষ্ণুকেও নারীরূপে মোহিনী হতে হয়। কিন্তু যেখানে সৃষ্টি বা ধ্বংসের কাজ সেখানে কখনই ব্রহ্মা বা শিবকে নারী হতে হয় নি। বরং কালী তখন পুরুষালী ত্যেজে দীপ্যমান। আর ব্যালান্স করার কাজে বাস্তব মানসিকতা অবলম্বন না করলে চলে না। সেখানে সাদা-কালো আলাদা করা যায় না। বাস্তবে সাদা-কালো মিশিয়ে থাকে। পুরুষ সাদা-কালো আলাদা করে দেখতে চায়। নারী জানে, সব কিছুই ধূসর, কোথাও কম, কোথাও ব্যাপক। যেমন রামায়ণ আর মহাভারত। নারী মহাভারত। পুরুষ রামায়ণ।

আসলেই নারীর মধ্যে রহস্য কিছু নেই। পুরুষ নারীকে নিয়ে কাব্য করে, আর নারী নিজেই কাব্য। ভাষার কাব্যিক মোহিনীমায়ার নারী কল্পনার নারী। গদ্যের নারী বাস্তবের জটাজালের সুতো ছাড়ায়, সুতো জড়ায়কবিতার ভাষাকে যদি গদ্যের বিভঙ্গিমায় পড়তে পারেন, অনুভূতির পার্থক্য কিছু থাকে না। সুররিয়েল অবশেষে স্বপ্নময়াই থাকে। জেগে উঠলে কঠোর বাস্তবে সালভাদোর দালি, রবীন্দ্রনাথ, কিম্বা জীবনানন্দ থাকেন না, তারা অপ্রয়োজনীয়থাকেন কেবল মা, দিদি, বোন কিম্বা বউ... নিদেনপক্ষে প্রেমিকা। আর সেগুলোও ঝেড়ে ফেলে দিলে?

থাকে একজন মানুষমাত্র। যার হৃদয় একটাই, মস্তিষ্ক একটাই। সেগুলো কার্যকরতাও একই রকম। ঠিক পুরুষের মতো।

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে