দ্য গ্রেট গড প্যান এবং দ্য হোয়াইট পিপল



ভয় পাওয়ানো, আর ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। জুজুবুড়ি টাইপ গল্পে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করানো হল ভয় পাওয়ানো। এখানে চট করে কোন শিশু বা শিশুতুল্য মানুষকে কিছুক্ষণের জন্যে বিশ্বাস করানো যায় এক অসম্ভব অস্তিত্বের সম্পর্কে, টেকে না বেশিদিন; আর অন্যদিকে, এক অপার্থিব অস্তিত্বকে বিশ্বাস করানো, একেবারে মূলে গিয়ে বিশ্বাস ধরিয়ে দেওয়া --- ভয় পাওয়ানো। এটার প্রভাব অমোঘ। অনেক ক্ষেত্রে ‘কাল্ট’ ব্যাপারটার সৃষ্টি হয়। ‘বাণ মারা’ এমনই এক বাংলা ভয় দেখানো ছেলেমানুষি। বিশ্বাস করতে মন চায় না, অথচ এড়িয়ে যেতে গেলেও বুক ধুকপুক করে। যে কারনে তান্ত্রিকদের এত রমরমা।

আর্থার ম্যাকেন ভয় ধরাতে পারেন। কারণ, তার লেখার কনটেন্টের মধ্যে প্রথমেই যে অপার্থিব জগতের সন্ধান দেন, তা আমাদের মরজগতের সমান্তরালে অবস্থান করে। এবং পাঠকদের এই দুই জগতের ঠিক মাঝামাঝি ফেলে রাখেন।

তার দুটি বিখ্যাত নভেলা ‘দ্য গ্রেট গড প্যান’ এবং ‘দ্য হোয়াইট পিপল’ যখন আমি পড়োছি তখন মধ্যরাত্রি। সারা দুনিয়া নিস্তব্ধ। শীতের রাতে দুরাগত ট্রেনের হুইসলও তখন খুব কাছের মনে হয়। সেখানে মনে মনে পরলেও মনে হয় যেন জোরে জোরে পড়ছি। এমনকি যা পড়ছি সেই চরিত্রগুলোও কেমন যেন বাস্তব হয়ে ওঠে।

পুরোনো লন্ডনের আবহে তৈরী হয়েছে দুটো নভেলাই। এবং দুটো নভেলার ভিত্তি রোমানদের অশুভ দেবতা। প্রথমটার দেবতা ‘প্যান’, এবং দ্বিতীয়টায় ‘হোয়াইট পিপল’ নামক এক জাতি। মজার ব্যাপার, যেটা ম্যাকেন মারাত্মকভাবে করতে পেরেছেন, সেটা হল, প্যান বা সেই মানুষগুলোকে একবারের জন্যে সামনে আনেন নি সরাসরি বদলে তার এফেক্টটাকে বার বার দেখিয়ে গেছেন। এবং এই এফেক্ট নেগেটিভ এফেক্ট। একটা বিষন্নতা, একটা ধ্বংসের ইঙ্গিত, ক্ষতির ইশারা। আর কে না জানে, নেগেটিভ এফেক্ট আমাদের মনে বেশি প্রভাব ফেলে --- “যত দুঃখ আশঙ্কায়”। ফলে মনস্তাত্বিতক ভয়াবহতার একটা চরম এফেক্ট একদম অন্তরমহল থেকে তৈরী হয়েছে এবং এই আবহাওয়া পুরো নভেলাদুটো জুড়েই এগিয়ে গেছে। ম্যাকেনের এই মুন্সিয়ানাই ম্যাকেনের অমোঘাস্ত্র। সাধে কি স্টিফেন কিং, ব্রাম স্টোকার বা লাভক্র্যাফট তাকে গুরু মানতেন! অতিমানবিক জগৎ তৈরীও হল, আবার অস্তিত্বের সংশয়ে ফেলে মানুষকে রহস্যাবৃত করে রাখা হল। সায়েন্সের সুক্ষ্ম মারপ্যাচকেও এড়ানো গেল। রহস্য এমনই এক জিনিস, যার পার নেই। ম্যাকেন কোন রহস্যকেই পারে ফেলেন নি। ফলে রহস্যের এই গোলকধাঁধাঁয় আমার ভয় পেতে বেশ লাগল। মনে হতে লাগল এই সাদামানব কিম্বা প্যান আমার আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে।

লুৎফুল কায়সারের অনুবাদ এককথায় চমৎকার। তবে ‘দ্য হোয়াইট পিপল’ নভেলার ক্ষেত্রে যেমন ফুটনোট তিনি দিয়েছেন, ‘দ্য গ্রেট গড প্যান’ নভেলাতেও যদি তা দিতে পারতেন ভালো লাগত। উদাহরণ দিই --- অসওয়াল্ড ক্রোলিয়াস, ডিগবি’র তত্ত্ব --- ফুটনোটে যদি এদের সম্পর্কে দেওয়া থাকত, তাহলে পাঠকের অবচেতনেই এই ‘প্যান’ গডের যথার্থতার প্রমাণ কল্পলোকের আঙ্গিনায় আরও কমপ্যাক্ট এফেক্ট ফেলতে পারত। আর কিছু কিছু জায়গায় বানান ভুল চোখে পড়ে। আরেকটু যত্ন নিয়ে প্রুফ চেকিং করাই যেতে পারত।

=======================================

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা

দ্য গ্রেট গড প্যান ও দ্য হোয়াইট পিপল

আর্থার ম্যাকেন

অনুবাদকঃ লুৎফুল কায়সার

কল্পবিশ্ব পাবলিকেশন

মুদ্রিত মুল্যঃ ২২৫/-


Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে