এক সন্ধ্যাঝড়ের মেঘ

 



Annie Ernaux-এর এই পর্বের কথনের নাম --- A Girl’s Story. এই কথন তার কোন আপনজনের কথন নয়। এ তার নিজের। তার বালিকাবেলার --- Summer of ’58। তার আগে তার নিস্তরঙ্গ জীবনের কোন খোঁজ তিনি তেমন করে দেন নি। খানিকটা হয়তো রয়েছে The Years-এ।

এই বইটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, আত্মনিমগ্ন, অন্তর্মূখী লেখিকা অপরকে, সমাজকে যতটা মন দিয়ে দেখেছেন, লিখেছেন, নিজের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই গুলিয়েছেন। কীভাবে শুরু করবেন নিজের কথা? কিভাবে বলবেন নিজেকে? যে বালিকা উদগ্র যৌনতার আকাঙ্ক্ষায় আকূল, অথচ তার জীবনে তার মায়ের কড়া পাহারা, এবং সার্ত্রে-ব্যোয়েভেরার মতো কল্পনালতা ছাড়া কোন রক্তমাংসের মানুষ নেই! এমন বালিকার কথা, লিখতে গিয়ে, খেই হারিয়ে ফেললেন, ফলে, প্রথম থেকেই বইটার প্রাণশক্তি ধুকপুক করতে লাগল, গতি পেল, যখন নিজের আকাঙ্ক্ষার কথা বলতে শুরু করেছেন, ততক্ষণে পাঠকের ধৈর্যের বাঁধে জোর ধাক্কা খেয়েছে এবং বইটার ঠিক এক-চতুর্থাংশ শেষ হয়ে গেছে।

অথচ উপক্রমণিকা লিখছেন কি সাংঘাতিক! সেই কয়েকটা কথাই পড়লাম কতোবার! কি জানেন? একজন বালিকা যদি প্রেমে পড়ে, আর যদি সেই প্রেমই সমস্ত আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করার একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে তাহলে কি হবে? তখন একসময়ে সেই সর্বগ্রাসী প্রেম তাকেই গ্রাস করে নেবে, ধ্বংস করে দেবে।

Summer of ’58 –এর বালিকা তার আগে কেমন ছিল? “The outside world, while not entirely barred to her, is an object of fear for her father and of suspicion for her mother.” আর Summer Camp –এ গিয়ে কি হল? ‘Freedom’ চাইছিল, কেমন সে স্বাধীনতা? “My memory fails to restore the state of mind produced by that mixture of desire and prohibition, the anticipation of a sacred experience combined with the terror of “losing my virginity.” অতঃপর কি ঘটল? “In my memory I am unable to find a single emotion, let alone a thought. The girl on the bed watches things happen to her that she never would have imagined happening an hour before. That is all.

      আসলে, বালিকার প্রথম প্রেমের অন্বেষণ, তাকে পেয়েছে ভেবে আঁকড়ে ধরা, তার নিজস্ব শরীর ও মনের উদগ্র যৌনতার প্রথম ধাক্কা এবং সম্পুর্ণ স্বাধীনতা --- তাকে দিশেহারা করে দিল। সে হয়ে গেল --- Whore Of the summer Camp ‘58

      এখানে একটা কথা বলার আছে। যৌনতায়, আমার মনে হয়, একটি পুরুষ এবং একটি নারীর চাহিদার তীব্রতার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সামাজিক নীতিবোধকে সরিয়ে রাখলে শুরুর দিনগুলোতে দুই পক্ষেই বোধহয় সমান কৌতুহল এবং মানসিক উত্তেজনা থাকে। ফলে এই সময় আবেগ অত্যন্ত তীব্র থাকে বটে, তবে তা স্থায়ী হয় না। কিন্তু তার একটা ছাপ শরীরে ও মনে পড়েই যায় আজীবনের জন্যে। অনেক সময় আমরা যাকে প্রথম ভালোবেসে ফেলি, তাকে আঁকড়ে ধরতে চাই। মনে হয়, একমাত্র এই মানুষটিই আমার সমস্তটা গ্রহন করবে। আমার ভাল-মন্দ, আবেগ-দ্বন্দ্ব, ঘৃণা-ভালোবাসা --- সব সব সব। এই ধারনা আস্তে আস্তে তাকে তার ক্রীতদাস করে তোলে। ফলে এমন একটা সময় আসে, যখন, সম্পর্কটাই একটা দমবন্ধ অবুঝ আবেগ হয়ে যায়। কেউ কেউ এর ফায়দা তোলে। ফুলের সমস্ত মধুকে শুষে নেওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করতে থাকে। একের পরে অনেক। ফুল ভাবে, এই তুষ্ট করার মধ্যেই বুঝি বা সমস্ত ভালোবাসার রহস্য লুকিয়ে আছে। অবশেষে ধুলোর মধ্যেই ছিন্ন ফুলের পরিসমাপ্তির মতো সম্পর্কের অবসান ঘটে। রেখে যায় এমন এক দাগ, যাকে প্রকাশ করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।

      অ্যানির জার্নাল তার মা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন, “…my mother burned at the end of the sixties, along with my journal from the time, certain that it was all to the good, for the sake of my social salvation, to destroy the evidence of the bad life her daughter had led before she went onto be a teacher of literature, marry “well,” and bear two children. Her daughter: her pride, her rage and crowning achievement. The truth survived the fire.”

      কিন্তু অ্যানি অবাক করেন। তার স্মৃতি থেকে যে সত্যকে তুলে ধরেন, সে সত্যকে এভাবে বলার ক্ষমতা কয়জন রাখেন? কোনরকম আকারে ইঙ্গিতে তিনি আমাদেরকে সুড়সুড়ি দেন না। তার যে বই বিক্রীর ইচ্ছা নেই। তার কেবল বলার ইচ্ছা আছে। নিজের উপলব্ধ অনুভূতিপ্রবন অভিজ্ঞতাকে কোনরকম আবেগ বা আড়ালবর্জিত করেই বলতে চান তিনি। আর এভাবেই বলে চলেন তার বালিকা বেলার পরম আখ্যান --- “The memory of what I have written is already fading. I do not know what this piece of writing is. Even the thing I was pursuing by writing this book has dissolved.”

 

================================================

A Girl’s Story

Author: Annie Ernaux (France)

Translated by: Alison L. Strayer

Seven Stories Press

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে