মায়েরা যেমন হয়
বইটা পড়ে ফেলার পরেও
প্রতিক্রিয়া লিখতে আমার ঠিক দুদিন সময় লেগে গেল। তার কারন উপন্যাসের বিষয়বস্তু --- মা।
‘মা’-র মহিমা কি? কেউ বলতে পারবে না এমন হয় না। এ ব্যাপারে গড়পড়তা
প্রায় সব বাঙালীই জানে, শুধু জানে না, এক সম্পূর্ণ আবেগময় জীবনও যাপন করে। আমি
নিজেও তাই। কিন্তু কেন? জানি না। হয়তো, তার শরীরের থেকে একসময় বেরিয়ে এসেছি বলে।
হয়তো, জন্মলগ্নের পর থেকে তার হৃদ্স্পন্দনের আওয়াজই ছিল আমার অস্তিত্বের
সংগ্রামের সহায়। হয়তো, তার মুখের আধো আধো আদুরে শব্দ আমার মুখে জাগিয়েছিল
আধো আধো ভাষাস্পন্দন – মাতৃভাষা।
“Naturally,
this isn’t a biography, neither is it a novel, maybe a cross between
literature, sociology, and history.”
মা-র কথা লিখতে
গিয়ে, Annie Ernaux বুঝতে পারছেন না, তিনি ঠিক কি
লিখবেন। তিনি এই প্রথম, সম্ভবত,
তার নিজের লেখার স্টাইলটার সম্পর্কেও তুলে ধরছেন, বা, বলতে বাধ্য হচ্ছেন। ‘মা’-র মহিমা এমনই, যে, তার কথা বলতে গিয়ে, আবেগবর্জিত হয়ে বলতে গিয়ে,
তার লেখনী থেমে থেমে যাচ্ছে। ভাষা
যোগাচ্ছে না।
“Tomorrow,
it will be three weeks since the funeral. It was only the day before yesterday
that I overcame the fear of writing “My mother died” on a blank sheet of paper,
not as the first line of a letter but as the opening of a book.”
আমি সত্যিই
বুঝে পাচ্ছি না, কি লিখব। কেমনভাবে লিখব। কারণ, মাতৃত্বে স্থান-কাল-পাত্রে সত্যিই
কোন তফাত নেই। শুনেছি, অনেক সন্তানের কাছে, মা বোঝাস্বরূপ, কিন্তু, তবুও, মা-কে
ছাড়া যে অসম্পূর্ণতা, তা জীবনের কোন এক লগ্নে কি সেই সন্তানের কখনও মনে হয় না,
বিশেষত, শৈশব, কৈশোরকাল জুড়ে যার জীবনে মায়ের প্রভাব ছিল আমোঘ?
উপন্যাসে মায়ের শৈশব, কৈশোর, যৌবন
এবং প্রৌঢ়ত্বকালের কথা আছে। বলা আছে, জীবন মানে একটা লড়াই, একটা স্বাধীনতাপ্রিয়তা। সেখানে
সে শুধু মা নয়, একজন মেয়েও। Annie
Ernaux-এর মা এমন একজন মহিলা ছিলেন, যিনি, সুন্দরী ছিলেন, কৈশোরে
প্রেমে পড়েছিলেন, বিয়ে করেছিলেন, যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্ব পর্যন্ত স্বাধীনভাবে দোকান
চালিয়েছিলেন, এবং স্বামীর মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে সম্পূর্ন একা হয়ে গিয়েছিলেন।
সমাজের অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে না পেরে একদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তার
জীবনযাত্রা।
আমি, বিশেষ করে বলতে চাই, শেষ অংশটির কথা। যেখানে,
“And here her story stops for there was no longer a place for her in
society. She was slowly turning insane. She was suffering from Alzheimer’s
Disease, the name given by the doctors to a form of senile dementia.” এই জায়গা থেকেই শুরু হয় আসল বেদনার যাত্রা। যাকে আমি জেনে এসেছি আমার
জীবনের বটগাছ, আজ তাকেই আস্তে আস্তে নিয়ে আসতে হচ্ছে আপন ছায়াতলে, “I
didn’t want her to become a little girl again, somehow she didn’t have the
“right.””, কিন্তু, তবুও, একে মেনে নিয়ে আস্তে আস্তে দৈনন্দিন জীবনে
ফিরে আসা দুজনের পক্ষেই এক মহাসংগ্রাম, “I started to cry because she was
my mother, the same woman I had known in my childhood.” মা-ও কি
তা পারে? না। “Dear Paulette, I am still lost in my world of darkness” – মা লিখছেন তার বোনকে। আস্তে আস্তে
তিনি সব ভুলছেন। চিঠি লিখতে ভুলছেন, জায়গার জিনিস
জায়গায় রাখতে ভুলছেন, এমনকি, বৃদ্ধ বয়সে
নিজেরই অজান্তে কাপড় নোংরা করে ফেলার লজ্জায় কাপড়টাকেই রেখে দিচ্ছেন মাথার বালিশের
আড়ালে।
এমনটা কি হয়
না? আমি দেখেছি। আমার পাশের বাড়ীর
এক দাদুর ক্ষেত্রে। তিনি লজ্জায় তার নোংরা লুঙ্গি ছুঁড়ে ফেলে দিতেন জানলা
গলিয়ে, পাঁচিলের ওপাশে। ধরা পড়ার পর
তার মুখখানি জাস্ট দেখা যেত না। এক বৃদ্ধ বয়সী
বালক তার এই অসহায় নির্লজ্জতা লুকাবে কোথায়? আর সে যদি মা হন? “She
was a little girl who would never grow up.” যার কোল একদিন
সন্তানের পরম মমতাময় আশ্রয় ছিল, আজ, সেই মা সন্তানের কোলে মাথা রাখতে বাধ্য হন।
এবং, অবশেষে একদিন ---
I kept
remembering that Sunday, when she was alive, the brown socks, the forsythia,
her mannerisms, her smile when I said goodbye, and then the Monday, when she
was dead, lying in her bed. I couldn’t put the two days together.
Now
everything is one.
আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি বইটা বন্ধ
করে রাখি। রাত এখন অনেক। বাইরে
ঝিঁঝিঁ-র ডাক আর শিউলির গন্ধ। আমি
আস্তে আস্তে এসে দাঁড়াই বাবা-মায়ের ঘরের সামনে। তাদের
নিশ্চিন্ত নিঃশ্বাস শুনতে পাই। আস্তে আস্তে
দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকি। হালকা রাত-আলোকের ছায়া-মায়া মেশানো আবিলতায় দেখতে পাই, মা এবং বাবা, দুজনে ঘুমাচ্ছে, পরম
নিশ্চিন্তে। আমার মায়ের মাথার কাছে বসতে ইচ্ছা করে। তার
কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলতে ইচ্ছা করে, আমি আছি, আমি থাকব…
==============================
A Woman’s Story
Author: Annie Ernaux (France)
Translated by: Tanya Leslie
Seven Stories Press
Comments
Post a Comment