আহা বেশ বেশ বেশ...

 



আজ বিজয়া। সকলকে শুভ বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ, আমরা সবাই জানি, অশুভ শক্তির শুভ শক্তির কাছে পরাজয়ের দিন ইত্যাদি ইত্যাদি [পুরোনো জ্ঞান নতুন করে আর বিতরন করব না]। শাস্ত্রে এর অনেক রকমের ব্যাখ্যা আছে। অনেক বুদ্ধিমান একে আরোও অনেক রকমে নিজের মনের মতন করে ব্যাখ্যা করেন এবং তা প্রতিষ্ঠাও করেন। এ নিয়ে অনেক বাক-বিতন্ডাও আছে। তবে, এই বছর, একটা ব্যপার চোখে পড়ল।

যা বুঝছি, এই মহিষাসুর আস্তে আস্তে সেলেব্রিটির পর্যায়ে উঠে আসতে চলেছে। এরকম চলতে থাকলে এমন একটা দিন হয়তো দেখা যেতেই পারে, মন্ডপে মন্ডপে মহিষাসুরের জন্মদিন পালন হচ্ছে। অনেক ক্লাব সেরা পূজোর শিরোপা জিতে ভরপুর আনন্দ করছে। পুরোহিত দর্পণের নব সংস্করণে তিনদিনব্যাপী মহিষাসুর পূজোর প্রণালী হঠাৎ করেই স্থান পেয়েছে।

সবকিছুই পরিবর্তনশীল – গীতায় না কি বলেছে। এটাও তবে কেন হবে না? আমরা ছোটবেলায় শুনতাম দুর্গার হাতে মহিষাসুর বধ নাকি অশুভশক্তির বিরূদ্ধে শুভশক্তির জয়। পুরোটাই সিম্বল মাত্র। কিন্তু হঠাৎ করে দুটো বিরুদ্ধ মত এখন ঠাসাঠাসি লড়াই করতে উদ্যত। ইতিহাস এবং পুরাণ দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হয়েছে নতুন করে। আদিবাসী বনাম আর্য সভ্যতা নতুন করে এই মিশ্র সভ্যতাকে সংকটে ফেলতে শুরু করেছে।

এই যেমন রুবি পার্কের কথাই ধরুন না কেন। মহাত্মা গান্ধীকে অসুর বানিয়ে দেওয়া হল। তার ছবিও বিদ্যমান। ছবিটা সোশাল মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত। ছবিটার সত্যতা আমি যাচাই করতে পারি নি। তবে বিশ্বাস, ক্যামেরা মিথ্যা কথা বলে না। এখন এই মানুষটিকে, সর্বদলসন্মতিক্রমে ‘জাতির জনক’ বলে মেনে নেওয়া হয়েছে সেই কোন যুগ থেকে। ‘মহাত্মা’ কোন আবেগের শিরোপা নয়। কিন্তু তাকে মনে করা হচ্ছে ভারতীয় দৃষ্টিকোণে একজন ‘অসুর’। এতবড়ো ধৃষ্টতা দেখিয়েও এনারা ছাড় পেয়ে যাবেন --- বাক্‌ স্বাধীনতা কিম্বা শিল্পের স্বাধীনতা। এই প্রসঙ্গে কিছু মানুষ বলতে চাইছেন, অসুর মহান অনার্য যোদ্ধা ছিলেন। কিছু মানুষ বলতে চাইছেন, অসুর মানেই কি খারাপ না কি? তাদের সাথে অনেক অন্যায় হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সবদিক থেকে বিচার করতে চাইলে ব্যপারটা কোন দিকে এগোচ্ছে ঠিক ঠাহর করা যাচ্ছে না। কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি, মহাত্মার মুখ অসুরের মুখে বসানো যত সহজ, ঠিক একই কারণে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর মুখ বসালে কিন্তু উক্ত প্যান্ডেলের একটাও বাঁশের চিহ্ন থাকত না। বাঙালীই এর যোগ্য জবাব দিত। উগ্র আবেগের পূজার এই হিপোক্রেসি থেকে আমরা যে কবে বেরোব সেটাই এখন গবেষণার বিষয় হওয়া উচিৎ।

এইসব বুদ্ধিমান মানুষ, যারা অসুরের জয়গান করছেন, তার উৎস যদি এই রুবি পার্কের মুর্তিটার সাপেক্ষে হয়ে থাকে, তাহলে তাদের শীঘ্রই মোমবাতি মিছিল শুরু করা উচিৎ, অথবা সোশাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা উচিৎ, যে পরেরবার বাংলার বড়ো বড়ো মহাত্মাদের মুখ অসুরের মুখের বদলে বসিয়ে পূজো করতে হবেই হবে। আফটার অল, কেন্দ্রের বঞ্চনা তো বহুদিন ধরেই চলছে। দুর্গাপূজো ইউনেস্কো স্বীকৃতি পেয়েছে। তাহলে এই সুযোগে, অসুর বন্দনার মধ্য দিয়ে যদি বিশ্বের দরবারে আমাদের দাবীটাকে আরোও পাকা করা যায়, কেন্দ্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়, ক্ষতি কি?

বাংলার তাবত মানুষকে শুভ বিজয়ায় এই অভাগিনীর তরফ থেকে এই আবেদন রইল।

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে