কারাগার

 



এক-একটা সময় আমার অবাক লাগে এই দেখে যে, কোন একটা দেশে একজন লেখকের প্রভাব কি পরিমাণ হতে পারে! সেই লেখক তার সমকালীন প্রায় সমস্ত শিল্পেই এমন প্রভাব ফেলেন, এমনকি সাধারণ জীবনযাত্রাতেও, যে তার থেকে বেরোনো সমকালের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। হয়তো ভবিষ্যতে হঠাৎ করে কিছু শিল্পী আসেন, বলেন, আমরা এই প্রভাব থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু একটা করব। একটা বৈপ্লবিক যুগ শুরু হয়, কিম্বা হয়তো অন্ধকার যুগ। যেমন, এদিকে রবীন্দ্রযুগের পর কল্লোল যুগ, এখন বোধহয় অন্ধকার যুগ চলছে।

ওদিকে, বাংলাদেশে চলছে হুমায়ুন যুগ। তাদের ভাষায়, লেখায়, এমনকি সিনেমাতেও হুমায়ুন আহমেদের অমোঘ প্রভাব দেখা যায়। এই যেমন, ‘কারাগারনামক ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে। কি গল্পের পটবিন্যাসে, কি সংলাপে, কি ক্যামেরায়, কি এডিটিং-এ --- সমস্ত কিছুতেই হুমায়ুন আহমেদের ছাপ। দেখে খুব ভাল লাগল। এমনভাবে একটা মানুষকে ধরে এগোনো শুরু হলে যে পূর্ণতার দিকে এগোনো সম্ভব, গোটা সিরিজটাই সেদিকেই এগিয়েছে। এমন ওয়েব সিরিজ দু-তিন মাসে একটা এলে অন্তত বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রের জগতে যে শ্বাসবায়ু আছে, সে যে বেঁচে আছে, সেটা বিশ্বাস করা যায়। যেটা বেলাশুরুবা অপরাজিতদেখার পর আই.সি.ইউ তো দূর, মনে হয় শ্মশানযাত্রা করেছে।

যাক গে, ধান ভানতে শিবের গীত গাইব না। সরাসরি আবার কারাগারে চলে আসি। বাংলাদেশ চঞ্চল চৌধুরীকে পেয়ে বর্তে গেছে। এমন ভার্সেটাইল অভিনেতা এই সময়ে বাংলায় আমি আর একটাও দেখিনি। কিন্তু শুধু কি তাই? পাশাপাশি যারা আছেন, তারা? কি আফজল হোসেন, কি ইন্তেখাব দিনার, কি আজাদ সেতু, কি এফ এস নাঈম, কি বিজরি বরকতুল্লাহ্‌, এমনকি তাসনিয়া ফারিন --- চমৎকার যথাযথ অভিনয় না করলে কারাগার শুধু চঞ্চল চৌধুরীরই থাকত, সেটা নিশ্চই সৈয়দ আহমেদ শাওকি-র ক্ষেত্রে গর্বিত হওয়ার মতো কিছু হত না।

একদিন এক কারাগারে দেখা যায় ১৪৫ নম্বর সেলে একজন বন্দী ঘুমিয়ে আছে। যে সেল ৪৫ বছর ধরে তালাবন্ধ। দেখা যায়, সে বোবা-কালা। অবশেষে জানা যায়, সে ২৫০ বছর ধরে বন্দী, মীরজাফরকে হত্যার দায়ে। জেলে হইচই পড়ে যায়, এবং তাকে ঘিরে অনেকগুলো কেন্দ্রবিন্দু তৈরী হয়, যার এক-একটা কেন্দ্রে এক-একজন নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্যে কর্মকাণ্ড ঘটাতে থাকে --- ঠিক যেন হুমায়ুনের কালো জাদুকর উপন্যাসের ছায়া। কিন্তু তবুও, ছায়া আর কায়ার মধ্যে যে স্বতন্ত্রতা আছে, সেখানেই নেয়ামত উল্লাহ মাসুমের কলমের জোর। পুরো সিরিজের প্রতিটা পর্বে গল্পটাকে বেঁধে রেখেছেন, অপূর্ব সব সংলাপ দিয়েছেন এবং অবশেষে তিনি ওয়েব সিরিজটাকে এক স্বতন্ত্র রূপদান করেছেন।

আমি এর বেশি কিছু বলে রসভঙ্গ করব না। তবে এটুকু বলা যেতেই পারে, বাংলা ওয়েব সিরিজের জগতে এই সিরিজটা একটা মাইলস্টোন হতে চলেছে, শুধু তাই নয়, ‘দুপুর ঠাকুরপোবা জাপানী ডলছেড়ে হইচইযে এই ধরণের কাজে হাত দিয়েছে তা খুবই আশার বিষয়।

 

===================================

 

কারাগার

অভিনয়ে: চঞ্চল চৌধুরী, আফজল হোসেন, ইন্তেখাব দিনার, আজাদ সেতু, এফ এস নাঈম, বিজরি বরকতুল্লাহ্‌, তাসনিয়া ফারিন

পরিচালক: সৈয়দ আহমেদ শাওকি

ডিস্ট্রিবিউটারঃ হইচই

 

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে