শারদীয়া কান্ড

 


সকালবেলা। তা বলে বেশি সকাল নয়। চারিদিকে পাখী টুকুটুকু ডাকছে। আকাশে এই মেঘ-বৃষ্টি-রোদ। বাতাস তেমন না বইলেও একটু ভ্যাপসা গরম সইয়ে নেওয়া যায়। রাস্তা দিয়ে সবজিকাকা ভ্যানে করে প্রাণপণে চিল্লাতে চিল্লাতে যাচ্ছে, 'সবজি নেবে গো' বলে; তার পেছনে সাইকেলে মাছ নিয়ে মাছজ্যেঠু; আর এরই মাঝে 'ফুরররররর...' বাঁশির  আওয়াজ দিয়ে জঞ্জালদা। এদের প্রত্যেকেরই আবাহনের আলাদা আলাদা সুর, পদ্ধতি। আর সেই আবাহন অনেকটা মহালয়ার মহিষাসুরমর্দিনী'র মতো। অমোঘ ডাকে ছেলে-বুড়ো-মেয়ে-বুড়ি উঁকি দেয়, ঘর থেকে বেরিয়ে আসে আর তারপরেই মৃদুমন্দ সকালের নীরবতার মাঝে ইন্টালেকচুয়ালি দরদাম করে। 

আমি এরই মাঝে উদাস মনে বক্স জানলায় বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে কফি খাচ্ছিলাম। এমন সময় --- 

পিঠে চটাস করে এক চড় এবং তারপরেই---

ধুম-ধাই-ধপ--- 

মা ঘর্মাক্ত এবং আরক্ত মুখে বিছানায় যে জিনিসগুলো রাখল, দেখে আমার হাড় হিম। মনে হল মাছজ্যেঠুর সাথে রাস্তায় নামি ‘মাছ চাই মাছ’ বলে চিল্লাতে চিল্লাতে, কিম্বা নিদেনপক্ষে মাতাল জঞ্জালদার সাহচর্যের কথা ভাবলেও আমার কাছে এই মুহূর্তে নিরাপদ ঠেকছে... 

এদিক ওদিক তাকালাম, ভাই একবার উঁকি দিয়েই চলে গেল। হতচ্ছাড়া! এই ছিল তোর মনে। ইডি কোথাকার! আমার লুকানো সম্পত্তি অতঃপর মাতৃকব্জায়। 

কিছু বলার আছে? 

ইয়ে মানে মাসকাবারির টাকায় ওটা এড করে দেব। 

ইঃ! বিষ নেই তার কুলোপনার চক্কর! বলি পয়সা তো বাপের থেকেই ঝাড়বি! লজ্জা করে না? জানিস এ মাসে ইলেকট্রিক বিল কত এসেছে? 

এরম বলছ কেন? আমি ঠোঁট ফুলাই, আমার নিজের থেকে টাকাটা দেব না হয়। আমার কাছে আছে। 

সেটাও তো বাপের থেকেই ঝেড়েছ--- 

মোটেই না। আমি পড়াই না? সেখান থেকে--- 

তাই বুঝি। তা কত কোটি টাকা মাসে ঘরে আনিস র‍্যা? বড়ো বড়ো কথা। দে হিসাব দে। তোর আয়-ব্যায়ের হিসাব দে। খালি চালাক চালাক কথা। কাল একজোড়া কানের দুল কিনলিআগের সপ্তাহে ব্লাউজ পিস বানাতে দিলি দুটো। তার দুদিন আগে নাইটি কিনলি একটা... এতই যদি পয়সা তাহলে এ মাসের ইলেকট্রিক বিল তুই দিবি তাহলে--- 

আরে না না। তা কেন। এগুলো বেশি দাম না তো, আমি বইগুলোতে হাত বোলালাম। 

তাই? বেশি দাম না? বেশ কত নিয়েছে আমি হিসেব করব। মা বইগুলোর দাম যোগ করতে বসলেন। পিঠটা তখনও জ্বালা জ্বালা করছে। 

.....................................................

 একঘন্টা পরে, অনেক ধস্তাধস্তি শেষে, আমি গোপনে অরিত্রীকে ফোন করলাম, শোন, জেমস বন্ডকে বলা আছে। বাকি পূজাবার্ষিকীগুলো তোর বাড়ীতে দিয়ে যাবে। তুই ছাড়িয়ে নিস। আমি বাবাকে ম্যানেজ করে টাকা নেব... সেই টাকা দিয়ে তোর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেব। আর আমার ওই নীল পাথরের কানের দুলটা পড়বি বলছিলি না, ওটা আজ বিকালে দেখা হলে তুই মনে করে নিয়ে নিস...

--------------------------

বিঃ দ্রঃ জেমস বন্ডকে ফোন করতেই বলেছিল, আনন্দমেলা নিবি নাকি? একটা বাঁচিয়ে রেখেছি তোর জন্য---

আমার মা-কে দিয়ে যেও

জেমস বন্ড ব্যাজার মুখে বলল, নিবি না বললেই হয়। তোর আর আমার মাঝে কাকীমাকে আনছিস কেন???

======================

মা কর্তৃক পূজাবার্ষিকীগুলোর বাজার মূল্য নিরূপণ (ঘড়ির বিপরীত অভিমুখে):

১। কৃত্তিবাস – ২৫০/-

২। সানন্দা – ২২০/-

৩। দেশ – ২৪০/-

৪। অন্তরীপ – ২৪০/-

৫। পত্রিকা – ২০০/-

৬। আনন্দলোক – ২২০/-

৭। আনন্দবাজার পত্রিকা – ২২০/-

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে