সম্পর্কঃ একটি কথোপকথন ও একটি প্রশ্ন



গীতাঃ কুক্কু’র সাথে তোর স্কুলে পরিচয়, না?

নয়নাঃ ক্লাস ফাইভে

গীতাঃ হে ভগবান! একটা পুরো সময় কাটিয়েছ তোমরা দুজন একে অপরকে বুঝতে, আমি তো বিয়ের চারদিন বাদে মুখোমুখি হয়েছি---

নয়নাঃ কি!!!

গীতাঃ না দেখা হয়েছিল দুএকবার, কিন্তু ভালো করে দেখি বিয়ের চারদিন পর যখন সব আত্মীয় স্বজনেরা চলে যায়। আর প্রথম বছরেই মনে হয়েছিল, আমি ভুল করেছি। কিন্তু তখন ডিভোর্সের কথা মনেই আসে নি। এরপর কুক্কু এল, গিন্নী এল। ওদের বড়ো করতে করতেই অর্ধেকটা জীবন কেটে গেল। আসলে আমরা কোনদিনই স্বামী-স্ত্রী হতেই পারি নি। বাবা-মা হয়েছিলাম বটে। বাচ্চারা বড়ো হওয়ার পর যখন নিজের নিজের পথে চলে গেল, তখন, আরোও একবার আমরা স্বামী-স্ত্রী হয়ে গেলাম। তখন যখন আবার ভাল করে ওকে দেখলাম, মনে হল, সত্যিই কি আমি এই মানুষটাকেই চেয়েছিলাম? মানুষটা কিন্তু খারাপ নয়, আমার যত্নআত্তি সে পুরোটাই করেছে, কিন্তু খেয়াল রাখা আর প্রেম হওয়ায়র মধ্যে পার্থক্য তো আছে একটা, তাই না?

(কান্না)

     এত বছরের সম্পর্ক একটা সময় অভ্যাস হয়ে যায়। আর অভ্যাস যেরকমই হোক না কেন তাকে ত্যাগ করা খুব কঠিন। আমি জানি না আমি ঠিক করছি না ভুল, কিন্তু কাজটা সত্যিই খুব কঠিন আমার কাছে।

(কান্নায় ভেঙে পড়া)  

নয়নাঃ মা, যা কিছুই ঘটুক না কেন, আমি আপনার পাশে আছি...

গীতাঃ একটা কথা কি জানিস মা, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কোন একটা কারণ হয় না। অনেক অসম্পূর্ণ লড়াইয়ের একটা ক্লান্তিও থাকে। যদি তুই সত্যিই ক্লান্ত হয়ে গেছিস বলে মনে হয় তোর, যদি সত্যিই আর তোর লড়াই করার ক্ষমতা না থাকে আর, তাহলে তুই এক মিনিটের জন্যেও ভাবিস না যে লোকে কি বলবে। যে ডিসিশানটাই তুই নিস না কেন আমি তোর পাশে আছি। কিন্তু যদি একটা সুযোগ দিতে পারিস তো অবশ্যই দিস, তোরা দুজনেই আমার ছেলে-মেয়ে

 

কথোপকথনটা ‘জুগজুগ জিও’ সিনেমার। শাশুড়ী আর বউমার মধ্যে। যেখানে একটা সময়ে দুজনেই ডিভোর্স চায়। দুই ঘন্টা আটাশ মিনিটের মাথাচেটে খাওয়া সিনেমা। বরুন ধাওয়ান আর কিয়ারা আদবানি ডিভোর্স চায় এটা বলতে খরচ হল পনেরো মিনিট আর দুটো গান। অনিল কাপুর ডিভোর্স চায় এটা বুঝতে লেগে গেল আধাঘন্টা, খরচ হল আরও দেড়খানা গান। প্রযাক্তার বয়ফ্রেন্ড আছে, তবুও সে বাধ্য হয়ে বিয়ে করছে, বুঝতে গেল এক ঘন্টা, খরচ হল দুট্টো গান। নীতু বেশ খুশি কিন্তু সেও খুশি নয়, বাধ্যতামূলক সংসারি সে, বুঝতে গেল দেড় ঘন্টা। তারপর কি হল? দেখেই নিন না হয়।

প্রেমজ সম্পর্ক বা স্বামি-স্ত্রী’র সম্পর্ক সবচেয়ে জটিল এবং এই মুহূর্তে অনেক অনেক সম্পর্ক এমন অনেক জটিল সমীকরণে দাঁড়িয়ে আছে। এ নিয়ে সিনেমা হয়েছে বিস্তর, হবে আরোও বিস্তর। কিন্ত তার মাঝে এরকম অনেক ভাড়ামো টাইপের কমেডি সিনেমাও আসবে, বিশেষত বলিউডে। পুরো সিনেমাটায় ট্র্যাজিক কমেডি (সেটাও ঠিক বলছি কি না খোদায় মালুম) ছাড়া কিছু নেই। কেবল এই একটা কথোপকথন মনে দাগ কেটে গেলমনে হল, এটাই সিনেমার স্পটলাইট। তারপরে আবার ঢুকে গেল কমেডিতে।

প্রশ্ন একটাই থাকে, সিনেমার আবহটা অত্যন্ত বড়লোক পরিবারের। এখানে বাপ-ব্যাটায় একসাথে মদ খায়। কিন্তু খুব সাধারণ পরিবারের ঠিক এই সম্পর্কের জটিলতাকে কীভাবে সমাধান করবে? এমনভাবে এত সহজে কি কোন স্ত্রী বলতে পারবে, আমি ডিভোর্স চাই। সামাজিক জটিলতা যে মুক্তিকে বা জীবন যন্ত্রণার উপশমের পথে প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ তার কি হবে?

এর মাঝেও আরোও দুই একটা জায়গায় অভিনয় দাগ কেটে যায় বটে, কিন্তু ইমোশনাল ড্রামা বলেই হয়তো বলতে ইচ্ছে করে না।

অভিনয় নিয়ে কিছু বলার নেই। প্রত্যেককেই যেমন যেমন অভিনয়ে দেখতে অভ্যস্ত তেমনই অভিনয় করেছেন। ফলে অতিরিক্ত কিছু বলার নেই।


===========================


JugJugg Jeeyo

Cast: Neetu Kapoor, Anil Kapoor, Varun Dhawan, Kiara Advani

Director: Raj Mehta

Duration: 150 minutes

OTT Platform: Amazon Prime


Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে