মানুষের হিতকামী একটি সিনেমা
কিছু কিছু সিনেমার ট্রেলার মনের মধ্যে এমনভাবে
ধাক্কা মারে যে মনে হয় এই সিনেমা না দেখলে লস আছে। এইবার আপনি গুছিয়ে দেখতে বসলেন
এবং অবশেষে বুঝলেন এটা যত গর্জাল তত বর্ষাল না। অতএব কি আর করা যাবে। আপনি মনের
দুঃখে দুমুঠো ভাত বেশিই খেয়ে ফেললেন। আর আমার মতো খ্যাতিকামী মহিলা একটা রিভিউ
লিখতে বসে পড়ল। ‘জনহিত মে জারি’ সিনেমাটা খানিকটা এই গোত্রের।
এরপরেও আমি আরেকটু বুদ্ধি প্রয়োগ
করে গুগল সার্চ মেরেছিলাম। বুইলেন মোশাই! লাইফে এমন কনফিউসড হইনি। IMDB তে 7.2
আর Rotten Tomatoes –এ 25%
আমি ‘লে কালুয়া’ বলে সিনেমাটা
চালু করে দিলাম। এবং পুরো সিনেমাটা দেখার পর ‘লে হালুয়া’ বলে খানিকক্ষণ বসে থেকে এক
মগ কফি বানিয়ে ছাদে চলে গেলাম প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে।
মানে সত্যিই বলছি, সিনেমাতে বিজয়
রাজ, অনু কাপুর আর বিজেন্দ্র কালা থাকার পরেও বলছি, অনেকটাই আমাকে হতাশ হতে হয়েছে।
সিনেমার বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার মধ্যে একটু খুঁচিয়ে হাসানো কমিক,
উত্তম মধ্যম গান, টুকুর টাকুর নাচ, নুসরতের মাঝে মাঝে সেলিব্রিটি টাইপের লুক দিয়ে
মফস্বলের দেমাকী উদ্ধত স্বাধীনচেতা ভাবকে এক্কেবারে ডুবিয়ে দেওয়া --- সবই আছে
সিনেমাটাকে ক্যাচানোর জন্যে। মাঝখান থেকে IMDB–র ওপর ভরসাটা চলে গেল, মানে, ‘গন্ধটা
খুব সন্দেহজনক’ আর কি।
তবে কি সিনেমাটাতে কিছুই দেখার
নেই? আছে। কন্ডোম কেন ব্যবহার করবেন? এটাই আসলে সিনেমার বিষয়বস্তু। এবং বর্তমান
সময়ে দাঁড়িয়ে এই বিষয়টা নিয়ে যে নারী-সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা সবচেয়ে বেশি উচিৎ, তা
নিয়ে সন্দেহ নেই। নারী মানে কি রেড লাইট বুঝলেন? আরে না না। নারী মানে আমাদের
মা-কাকীমা আর কি। এবার এদের কাছে কন্ডোম বিক্রী করতে বা সচেতনতা বাড়াতে কোন পুরুষ
এলে তো মহামুশকিল। প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফেরত আসতে পারবে না, সে যতই নিষ্কলুষ চরিত্রের
হোক না কেন। সুতরাং মেয়েদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আর নুসরত এই কাজটাই করার অভিনয়
করেছেন সারা সিনেমা জুড়ে।
ভাই নুসরত। যে কোন প্রোডাক্ট বেচা
একটা আর্ট, এটা এখন মায়ের পেটের একটা বাচ্চাও বোঝে। আর কন্ডোম বেচা তো আরোও বড়ো
আর্ট। কারণ ভারতে, এবং বিশেষত গ্রাম ও মফস্বলে এখনও এটা একটা ট্যাবুর পর্যায়ে।
সেক্স নিয়ে কথা বলতে আমরা এখনো হাকলাই। হাই স্কুলে বায়োলজির শিক্ষক-শিক্ষিকারা এর
একটা বড়ো উদাহরণ। সেখানে আপনি এত সুন্দর মিষ্টি করে বলছেন কন্ডোম ব্যবহার করতে আর
সারা মহিলাকূল আস্তে আস্তে কিনতে শুরু করল এবং আপনি নিউজের প্রাইম টাইমে চলে এলেন
অবশেষে --- ব্যাপারটা কেমন যেন সোনার পাথরবাটি লাগল। আপনি প্রোডাক্ট সেলার না
বিউটি কুইন সেটাই বোঝা গেল না। বরং একটুখানিক সময়ে আপনি যে হঠাৎ করে বিজ্ঞাপনের
মুখ হয়ে গেলেন (নুসরত এই সিনেমায় সর্বঘটের কাঠালি কলা), সেই জায়গাটা খানিকটা
বিশ্বাসযোগ্য হল বটে।
হঠাৎ করে ঘরের খাপ পঞ্চায়েতে আপনি
সবাইকে সন্মত করে ফেললেন; গ্রামের খাপ পঞ্চায়েতে আপনি বিবেকবতী হয়ে গর্জে উঠলেন;
শ্বশুরবাড়ীর খাপ পঞ্চায়েতে বিচক্ষণ চালাক হয়ে গেলেন, স্বামীর খাপ পঞ্চায়েতে আপনি
বিদ্রোহিনী হয়ে গেলেন আর কন্ডোম কোম্পানীর খাপ পঞ্চায়েত আপনি নিজেই প্রথমদিন থেকেই
বসাতে শুরু করলেন এবং যে কোম্পানী এক সময় বছর কয়েক ধরে লসে রান করছে তারা একেবারে
ভোটের মঞ্চের বিজ্ঞাপনদাতা হয়ে গেল, টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করার মতো লাভবান কোম্পানী
হয়ে গেল --- সবটাই আসলে কেমন যেন প্রভাত রায়ের সিনেমা হয়ে গেল, মনে হল গল্পটা
লিখেছেন চিত্তরঞ্জন মাইতি। দোষটা পরিচালক জয় বাসান্ত সিং-এর, না কি লেখক রাজ
সান্দাইল্লার সেটা নিয়েও অবশ্য তর্ক করা যেতে পারে।
কিন্তু, তবুও, সিনেমাটার বিষয়বস্তুই একমাত্র আমাকে ভাবিয়েছে। কফি খেতে খেতে ভেবেছি, সত্যিই গ্রামের মেয়েরা এখনো কতটা অসহায় --- সম্পর্কে অসহায়, মতাদর্শে অসহায়, যৌনতায় অসহায় ইত্যাদি, ইত্যাদি ইত্যাদি...
এবং কফি
শেষ...
===============================
Janhit Mein Jaari
Cast: Nushrratt Bharuccha, Paritosh Tripathi, Brijendra
Kala, Tinu
Anand
Director: Jai Basantu Singh
Duration: 2hrs. 26 Mins
Comments
Post a Comment