সৌরভিত পঞ্চাশ
“আপনি ক্রিকেট খেলতে পারেন, ফুটবল খেলতে পারেন। দশটা-পাঁচটার চাকরিও করতে পারেন। কিন্তু বলুন তো, বাঙালি হয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রভাব পুরোপুরি উপেক্ষা করে যেতে পেরেছেন কখনও? জীবনের বিপদসংকুল বাঁকে, অসম্ভব চাপের কাছে নতিস্বীকারের প্রাক্-মুহূর্তে, মনে হয়নি সৌরভের মতো আমিও পালটা দিই? মনে হয়নি, ছেলেটা তো আমাদের মতোই রক্তমাংসের। কিন্তু তবু ছেলেটা কখনও হারতে শেখেনি।”
‘দাদার কীর্তি’ শিরোনামে
প্রতিদিনের রোববার ম্যাগাজিনটা যখন শেষ করলাম তখনও ঝুলন গোস্বামীর এই কথাগুলো মনের
মধ্যে অনুরণিত হচ্ছিল। সত্যিই কি তাই নয়? তাবৎ বাঙালী সমাজের এই আইকনকে অনেকে অনেক
কারনে পছন্দ করেন। বাংলার বাইরের বেশিরভাগ মানুষই তাকে মনে রেখেছেন একজন কিংবদন্তী
অধিনায়ক আর একজন মাথা উঁচু করে লড়াকু প্লেয়ারকে। তার ঝুলিতে খুব বেশি বলার মত কোন
রেকর্ড নেই, কিন্তু তবুও বেশ ঈর্ষনীয় ক্যারিয়ার। কিন্তু বাঙালীর তাকে মনে রাখা
উচিত একজন হার না মানা, একজন জেদী, তুমুল আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন মানুষ হিসাবে।
দেখুন, আজ বাদে কাল হয়তো খেলোয়াড়
হিসাবে তাকে ততটা মনে রাখবে না। কেননা T20–র যুগে ভিভ রিচার্ডস বা ডন ব্রাডম্যান
আস্তে আস্তে চাপা পড়ে যাচ্ছে রোহিত শর্মা কিম্বা এ বি ডিভিলিয়ার্সের মুগ্ধতায়। তাদেরকে
অশ্রদ্ধা কেউ করে না তা বলে। কিন্তু রেলিভেন্সি হারাচ্ছে, কারণ, খেলার প্যাটার্ন
বদলাচ্ছে। খেলোয়াড়দের মানসিকতা বদলাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেট এখন পাঁচদিনও গড়াতে চাইছে
না। চেতেশ্বর পূজারাকে কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই রাখতে চাইছে না, না ওয়ান ডে-তে না T20-তে।
কিন্তু এর মধ্যেও একটা জিনিস মানুষ মনে রাখে, তা হল যে কারণে তারা জিনিয়াস।
দাদা জিনিয়াস, আমার কাছে, এই হার
না মানা মানসিকতার জন্যে। এখন চারিদিকেই কেমন যেন হালছাড়া মনোভাব। একটুতেই মানুষ
ভেঙে পড়ছে। একা হয়ে পড়ছে, একা একা ঘরের এককোনে বসে বিষন্নতায় ভুগছে। কিন্তু একা
লড়াই করে এগোনোর কথা ভাবার মতো শক্তি পাচ্ছে না। কারণ, তাদের সামনে কোন সৌরভ
গাঙ্গুলী নেই। যে অতীত হয়ে গেছে, তাকে দিয়ে বর্তমানে কাউকে বেশিক্ষন উদ্বুদ্ধ করা
যায় না। মানুষের সামনে মানুষ আদর্শ হিসাবে এসে না দাঁড়ালে মানুষ এগোবে কোন পথে?
দাদা তোমার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল। তোমাকে
অভিবাদন। আমার একরাশ ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা তোমাকে। জানি এত এত মানুষের অভিনন্দনের
ভীড়ে এ সামান্য শুভেচ্ছাবাণী হারিয়ে যাবে। কিন্তু, তবুও বলি, তোমাকে প্রয়োজন খেলার
মাঠে; তোমাকে প্রয়োজন ক্রিকেট একাডেমীতে; তোমাকে প্রয়োজন স্কুলে-কলেজের হাজার
হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে। আজ একজন যোদ্ধাকে প্রয়োজন, ম্যানেজমেন্ট পলিটিক্সের
টানাপোড়েনে আটকে থেকে আরেকটা হার্ট এটাক তোমাকে মানায় না, কোথাও যেন মানায় না
দাদাগিরি’তেও। তুমি এবার ফেরো KING হয়ে নয়, এবার তুমি ফেরো KINGMAKER হয়ে...
৬৬ পৃষ্ঠার এই ম্যাগাজিনটা সত্যিই
অনবদ্য। পাতায় পাতায় সৌরভ নিয়ে বলেছেন যারা তাদের মধ্যে আজহারউদ্দিন, মুরলীধরণ,
শেহবাগ, আফ্রিদি, মোর্তাজা, ঝুলন গোস্বামী, গোপীচাঁদ বা বোরিয়া মজুমদারের লেখা মনে
দাগ কেটে যায়। তবে অরিঞ্জয় বোসের সাথে কথোপকথনটা সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে। সব
মিলিয়ে ‘দাদাপ্রেমী’দের জন্যে সংগ্রহে রাখার মতো বই।
শেষ করি একটা ছোট্ট কথোপকথন দিয়ে
---
অরিঞ্জয়ঃ আচ্ছা, জীবনের ৫০ তো হয়ে গেল। দ্যাখো,
টিন-এজাররা তোমার কাছে ইন্সপিরেশান খোঁজে। তিনটে টিপ্স, যা তুমি টিন-এজারদের
উদ্দেশ্যে দেবে।
সৌরভঃ হার্ড ওয়ার্ক। ইউ হ্যাভ টু। নাহলে কোত্থাও যাওয়া যাবে না। যে কোনও বিভাগে, দেয়ার ইজ নো ইজি ওয়ে টু সাকসেস। ইউ মাস্ট ড্রিম বিগ। আদারওয়াইজ, ইউ উইল নট রিচ ইয়োর গোল। থার্ডলি, রেসপেক্ট। সবাইকে সন্মান দিতে জানতে হবে। বড়কেও রেসপেক্ট, ছোটকেও রেসপেক্ট। বন্ধুকে রেসপেক্ট, শত্রুকেও রেসপেক্ট। টু লার্ন হাও টু রেসপেক্ট ইজ ভেরি ইম্পটেন্ট।
Comments
Post a Comment