চমকে দামিনী, দমকে চাপদাড়ি, গমকে 5.1



কাল রাত্রে ভাই চুপিচুপি কিছু একটা বড়োসড়ো বাক্স নিয়ে ঘরে ঢুকেছিল, খেয়াল করেছি, পাত্তা দিই নি। ভাইয়ের সাথে আমার সাপে-নেউলে সম্পর্ক। ফলে আমার কি দায় পড়েছে বাবু রাত-দুপুরে কি নিয়ে ঘরে ঢুকলেন এসব নিয়ে পাত্তা দেওয়ার? মায়ের পেয়ারের ছেলে, তিনি বুঝবেন। আমি আগ বাড়িয়ে ঝ্যাটার বাড়ি খেয়ে মরি আর কি!

আমার আর ভাইয়ের ঘর পাশাপাশি। রাত-দুপুরে অনেকক্ষন ধরে ঘুটুর ঘাটুর আওয়াজ পেয়েছি। কৌতুহল হয়েছে, ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছি দরজা বন্ধ। এতএব কৌতুহল দমন করেছি। ঘরে এসে শুয়ে পড়েছি।

 

সকালে ভাইয়ের চওড়া হাসি, তোকে একটা জিনিস দেখাবো।

হ্যাঁ হ্যাঁ। দেখব বৈ কি!

দুপুরে খেয়ে আসিস আমার ঘরে। আজ তোর কাজ নেই তো?

না, বলে একটু আশঙ্কিত হলাম অবশ্য। তবুও নতুন কিছু দেখা কি ছাড়া যায়?

 

দুপুরে ঘরে ঢুকেই তাজ্জব। ভাই 5.1 লাগিয়েছে সারা ঘরের ছাদ জুড়ে! বাবা টাকা দিল!!!!!! আর আমি হাত পাতলেই...

আরে এরকম করে আছিস কেন মুখটা? দ্যাখ না কম্পিউটারের সাথে লাগিয়ে দিয়েছি। হেব্বি সিনেমা দেখতে পারবি। তবে প্রথম চয়েস আমার...

আমি এককথায় রাজী। তারপর আমাজন প্রাইম খুলতেই...

ঈ ঈ ঈ ঈ ঈ... আমি দেখব না..., বলে দৌড়ে ঘর থেকে বেরোতে গেলাম। দরজা পর্যন্ত পৌছানোর সুযোগ পেলাম না। দুটো ক্যাংড়া কিন্তু বলিষ্ঠ হাত পেছন থেকে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে মাটি থেকে ওপরে তুলে নিল। একটু পরেই আমি আবার সোফায় বসে, আগের জায়গায়। পার্থক্য একটাই, ভাই এবার আমার একটা হাত নিজের দুহাতে এক্কেবারে বাহুমূল পর্যন্ত চেপে ধরে বসে আছে।

 

KGF CHAPTER 2

(রিভিউ) শুরু হল---

[Background-এ ধমাকাদার মিজিক]

 

...তারপরে তো চাপদাড়ি গোল্ড মাইন জয় করেছে। কেউ (সরকার) কিচ্ছু জানে না। ওদিকে হয়েছে কি বাকি খারাপ লোকেরা হুড়মুড় করে চলে এসেছে। এদিকে চুলবুলি মেয়েটা চাপদাড়ির কাছে বন্দিনী। ওদিকে তার প্রেমিক মরে গেল চাপদাড়ির গুলিতে। এর মধ্যে এক ব্যাটা বলল, পক্ষীরাজ (মাফিয়া) যদি হবে? লেজ (সোনা) নেই কেন? তাই তো! কেন? এতএব সোনা তোলো। এতএব সঞ্জয় দত্ত ঢুকে পড়ল আগুনের সেতু বেয়ে।

আর তারপরেই সে কি মার সে কি মার! চাপদাড়ি কি পেটান পেটাচ্ছে, গাড়ী উল্টাচ্ছে, শত্রু পটকাচ্ছে, সব একহাতে। আরেক হাতে গাড়ী চালাচ্ছে। কারা যেন চাপদাড়ির প্রেমিকাকে নিয়ে যাচ্ছে। তারপরে সঞ্জয় দত্ত গুড়ুম করে গুলি মারল। আওয়াজে মনে হল গুলিটা আমার বুকেই ঢুকল। ভাইও একটু চমকে উঠে সাউন্ড কমাল। চাপদাড়ির বাড়ির লোক সবাই কাঁদছে। চাপদাড়ি না কি মেশিহা! এদিকে পার্লামেন্টে কারা যেন কি সব বলছে হাত তুলে। থালাইভা কে? রজনীকান্ত তো নয়! একটা ভোঁতামুখো বেটে হোৎকা। চাপদাড়ি আর থালাইভা বন্ধু? না কি শত্রু? কিছুই বুঝছি না। এরপরে কালাশনিকভ গর্জে উঠল। সঞ্জয় দত্ত চেঁচাচ্ছে। আঁ আঁ আঁ আঁ... তার সব লোক মারা যাচ্ছে। বন্দুক আর সঞ্জয় --- দুজনের আওয়াজে ভাই আমাকেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আমি বললাম, ভাই, আমি বাথরুমে যাব। ভাই শুনতে পেল না।

তারপর “ভায়োলেন্স ভায়োলেন্স ভায়োলেন্স...” বলে চাপদাড়ি কিছু কথা বলল। মোট কথা সঞ্জয় দত্ত জ্যান্ত ছাড়া পেল। তারপর দেখানো হল, লোডশেডিং হলে হেলিকপ্টার এসে বাতাস দেয়। আর কাজের লোকেরা পাপড় সামলায়। তারপর প্রেমিকার সাথে বিয়ে হল চাপদাড়ির। লুতুপুতু ভালোবাসাবাসি হল। তারপর প্রেমিকা বলল, তার আম আর লেবু খেতে ইচ্ছে করছে, মা আসছে। কার মা? চাপদাড়ির মা। তারপর দেখাল ইন্দিরা... অঃ... রবিনা ট্যান্ডন বলছে, আমি চাপদাড়িকে ধরবই। কিন্তু... পারল না। চাপদাড়ি সামনে বসে ধরা দিতে চাইল। তবুও ধরতে পারল না।

তারপর আবার মার, মার আর মার... সে কি মার! এ ওকে মারছে, সে তাকে মারছে। সঞ্জয় দত্ত চাপদাড়িকে মারছে, তো চাপদাড়ি হাতুড়ি নিয়ে সঞ্জয় দত্তের তলোয়ার ভেঙে দিচ্ছে। কিন্তু কে কোন দলের লোক রে বাবা! মজার কথা, ভাইকে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলাম, কে কোন দলের লোক? ভাই মুখ বেঁকাল। সে-ও বুঝতে পারছে না। কে যে কাকে মারছে, কেন মারছে, কি আনন্দে মারছে, কিভাবে মারছে --- সেটা সাতজন্মের গোলকধাঁধা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে দিদি নং ১ -এ এই সিনেমার একটা ফ্রেম দেখিয়ে রচনা ব্যানার্জী জিজ্ঞাসা করতেই পারেন, বলো দেখি, ছবিতে কে ভালো মানুষের পো, আর কে বদ পাবলিক? সঠিক উত্তর দিলেই একটা প্রেসার কুকার...

ও দাড়ান দাড়ান। তারোও পর আছে। চাপদাড়ি বন্দুক নিয়ে সাংসদে ঢুকে পড়ল এমনভাবে যেন মামাবাড়ি ঢুকছে। আরে সন্ত্রাশবাদীর ব্যাটারা! তোরা চাপদাড়ির কাছে ট্রেনিং নিস না কেন? দ্যাখ দিকিনি! কত সহজে ঢুকে পড়ল! ও বাবা! থ্যালাইভাকে মেরেও দিল! কেন মারল রে? ও ভাই? ভাই কিছুই বলল না। শুনতে পেল না? না কি এড়িয়ে গেল?

দাড়ান দাড়ান। এরও পর আছে। চাপদাড়ি এবার ইন্ডিয়ান ওশানে। আমেরিকা, ভারত আর থাইল্যন্ডের নেভির লোক মিলে বোমাবর্ষণ করল সোনায় ভরা চাপদাড়ির জাহাজে। চাপদাড়ি মরে গেল। গেল কি? কে জানে। চ্যাপ্টার 3 এলে বোঝা যাবে। আসবে কি? খোদায় জানে। ওদিকে কোলার গোল্ড ফিল্ডে গিয়ে সেনাবাহিনী বোমাবর্ষণ করল। আর ওখানকার লোকেরা অন্য জায়গায় গিয়ে বসতি করল।

পুরো গল্পটা বলল প্রকাশ রাজ একটা মা মা টাইপ দেখতে সাংবাদিক মেয়েকে। কেন বলল? না প্রকাশ রাজের বাবা ICU তে। কেন? জানতে হলে, এবং বুকে দম থাকলে KGF CHAPTER 1 দেখতে হবে...

লোকে সামনে থেকে পেছনে যায়, আমি শেষ থেকে আগে আসছি। দেখে মনে হল এই সিনেমায় আগা-পিছা দুটোই সমান।

 

যাই হোক, আমরা দুজনেই সিনেমার শেষে অনেকক্ষণ কানে কিছু শুনতে পাই নি।

 

রাত্রে ভাই বলল, বন্ধুর কাছ থেকে সাউন্ড সিস্টেমটা ধার করে এনেছিল আমাকে না কি সিনেমাটা দেখাবে বলে...

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে