রাজা
অন্ধকার
থেকে উত্তর ভেসে এল, বেশ তো।
আমি আবার
চীৎকার করে চ্যালেঞ্জ ছুড়লাম, তুমি কি পারো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে?
অন্ধকার
নিরুত্তর।
আমি বললাম,
আমি কাউকে বিশ্বাস করি না। কোন কিছুকে বিশ্বাস করি না। তোমাকেও বিশ্বাস করি না।
অন্ধকার
থেকে ভেসে এল, কেন?
আমি বললাম,
বিশ্বাস করার কিছু আছে কি? তুমি কি আছো? তোমাকে বিশ্বাস করে এতটা পথ হেটে এলাম। তাতে
কি হল?
-
আমার কথা বাদ দাও। আরোও অনেক বিশ্বাস
যেগুলো ছিল সেগুলো সম্পর্কে কিছু বলো।
-
আরো অনেক বিশ্বাস! অনেক কিছুই ছিল।
যে কোন সম্পর্কের শুরুতে অনেক বিশ্বাস ছিল। যাদের ভালোবাসতাম, মনে হতো, তারা কখনও
আঘাত দেবে না। যদিও বা আঘাত করে, তাহলে কথার প্রলেপে সেই যন্ত্রণা তারা ধুইয়ে
দেবে। কিন্তু কোথায় কি? এখানে সবাই সবাইকে যেন মেপে নিচ্ছে বিকারগ্রস্থের মতো।
সবার সাথে সাথে আমিও আস্তে আস্তে সবাইকে মেপে নিতে শিখে যাচ্ছি।
আমার মাথার মধ্যে যেন বিষাক্ত অ্যাগারিকাসের কলোনী। আমার হৃদয় মরুভূমির কাঁটাঝোপ।
কারোর মুখের কথায় আর বিশ্বাস হয় না। এমনকি শিশুরও নয়।
-
আর?
-
আর নিজের মাথা, নিজের হৃদয়কেও
বিশ্বাস হয় না আর। যখনই কারো প্রতি দুর্বলতা অনুভব করি, ভয় হয়। যখনই কেউ এগিয়ে আসে
আমার দিকে, রুদ্রমুর্তি ধারণ করি। ছিন্নভিন্ন করে দিই তাকে। সে আমাকে আঘাত করার
আগে আমি তাকে আঘাত করি। আমার মনে হয়, আমাকে কেউ পেড়ে ফেলার আগে আমি তাকে পেড়ে
ফেলব।
-
সেসব করে কি পেলে?
-
জানি না। প্রতিশোধ। জয়। জেতার
উল্লাস। ক্লান্তি, হতাশা, সিকিউরিটি।
-
সিকিউরিটি? সত্যিই কি তুমি নিরাপদ?
-
কি জানি। না বোধহয়। তবে আমাকে অনেকে
ভয় পায়। অনেকে জানে আমাকে ছোঁয়া যায় না, ছুঁতে নেই। আমি
সকলের থেকে দুরত্ব রেখে বাঁচতে চাই। বেঁচে আছি।
-
এ কেমন বেঁচে থাকা?
-
এটাই বেঁচে থাকা। না হলে রক্তাক্ত
হতে হতে, ক্লান্ত হতে হতে একদিন মুখ থুবড়ে পড়ব। তোমার কাছে যাওয়ার জন্যে যে পথে
নেমেছিলাম একদিন ভোরবেলায়, আজ তো সেই পথে মধ্যরাত্রি। তবুও তুমি কোথায়? কোত্থাও
নেই। তুমি কি আছো? সত্যিই আছো? না কি তুমিও আমার মনের ভ্রম, মনের কল্পনা, মিথ্যা?
-
সত্যি বলে কি কিছু আছে?
-
তবে যে সবাই বলে তুমি সত্যি?
-
সবাই বলে, তুমি কি বলো? যতক্ষণ না
আমায় পুরোপুরি জানতে পারছো ততক্ষণ সত্যি বলে কিছু নেই। এমনকি ঈশ্বরও মানুষের
কল্পনামাত্র। মানুষ কল্পনার হাত ধরেই এগোয়। কল্পনাই তাকে পথ দেখায়। সেই পথই
বিশ্বাস। মাঝে মাঝে সেই পথ অন্ধকারে ডুবে যায়। তা বলে তার চলা কেন আটকাবে? যতক্ষণ পথ আছে, ততক্ষণ আশা আছে। পথের অস্তিত্বেই সত্যের ইঙ্গিত।
-
আমি কি করব তাহলে? আমার আশেপাশের কোন
কিছুকেই যে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না! কাউকে বিশ্বাস হয় না। কোন আশা পাই না। এত
ক্লান্তি লাগে যে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। এমনকি নিজের সাথেও না।
-
বিশ্বাস কোরো না। কোনো জোর-জবরদস্তি
নেই। তবে পথ চলা থামিও না। চলার বেগেই পথ পাবে। তুমি আলোয় আছো না অন্ধকারে আছো
সেটা বড় কথা নয়। তুমি আছো্, এটাই বড়ো কথা। এই থাকাটাতেই সমস্ত অস্তিত্ব। এই
চেতনাতেই সমস্ত বোধ। তুমি কেবল নিজের বোধ অন্যের মধ্যে সঞ্চারিত করার চেষ্টা কোরো
না। অন্যের বোধ নিজের মধ্যে সঞ্চারিত করার চেষ্টা কোরো না। তুমি এগিয়ে চলো। লক্ষ প্রতিকূলতার
ধাক্কা সামলে এগিয়ে চলো। নিজেকে, নিজের অবস্থাকে স্বীকার করে নিয়ে এগিয়ে চলো। আমি
তোমার সাথে আছি। আমার আওয়াজ তোমার সাথে সাথে থাকবে। ডাকলেই সাড়া পাবে। কেবল ডেকো।
আমি আবার
উঠে দাঁড়াই...
Comments
Post a Comment