এসো এসো, বন্ধু এসো...

 

ওই হয় না একরকম, এক-একটা কালোত্তীর্ণ সুর বা গান যখন অত্যন্ত দুর্বলভাবে অন্য কেউ পরিবেশন করে তখনও মনে হয় শুনি। কারণ ওই ভালো লাগাটাকে তো আর অস্বীকার করা যায় না। শুনতে শুনতে মনে হয়, না না, হচ্ছে না, ঠিক হচ্ছে না। এমনভাবে মনটা আবার চলতে থাকে আসল সৃষ্টির দিকে মানে, যেখানে আমার আসল ভালো লাগাআর তারপর একসময় সেটা যতক্ষণ না শুনছি, ততক্ষণ শান্তি হয় না।

 

ব্যাপারটা খুলেই বলি, ফেসবুকের টাইম লাইন ধরে এগোচ্ছিলাম আনমনে। হঠাৎ ZEE OTT প্ল্যাটফর্মে একটা শর্ট ফিল্মের ট্রেলার এল, আর পেছনে সেই কালোত্তীর্ণ গান ---

 

Yaar e man biyaa biyaa...

Come my Friend, come...

এসো এসো, বন্ধু এসো...

 

উস্তাদ আমীর খাঁ সাহেবের দরবাড়ী কানাড়া’র দ্রুতের এই সময়টায় উস্তাদজী ডাকেন তার প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে, তার রুহ্‌ যেন ফেটে পড়তে চায় একটা সময়। আমি দম বন্ধ করে শুনি, প্রতিবারই...

এবার ওই গান, ট্রেলারের কিছু কিছু দৃশ্য --- সব মিলিয়ে এমন হল যে সিনেমাটায় ঢুকে গেলাম। আর যা ভেবেছিলাম তাই। তনুজা চন্দ্রার এই সিনেমাটা আহামরি কিছু না। কার্তিক আরিয়ন আর মেহের মিস্ত্রীকে দিয়ে যেন জোর করে অভিনয় করানো হচ্ছে প্রথমদিকে পরের দিকে মেহেরের বেশ কিছু অংশের অভিনয় চমকে দেয়। একদমই হেলাফেলা করার মতো অভিনয় অন্তত মেহের করেনি। কিন্তু কার্তিক আরিয়ন আমার মনে তেমন দাগ কাটতে পারেনি। গল্পটাতে জমাট ভাব কিছুই নেই। খুবই প্রেডিকেটবল। তবে প্রথম দিকে যতটা অগোছালোভাবে সিনেমাটা শুরু হয়েছিল, আস্তে আস্তে জমাট বেধেছে এবং শেষ পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই উতরে গেছে।

সিনেমার মধ্যে কিছু মুহূর্ত এত সুন্দর যে সিনেমাটা শেষ হওয়ার পরেও মুহূর্তগুলো রয়ে যায়। যেমন, মেহেরের আনমনে চায়ের কাপ ধোয়া। ঠোঁট ছোয়ার জায়গাটায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দেওয়া। কি পরম মমতায় সে অনুভব করতে চায় প্রেমষ্পদেষুর ঠোটজোঁড়াকে!

কিম্বা, সে আসবে বলে ভাঙা ঘরটাকেও সে সুন্দর করে সাজাতে চায়। টানটান করে রাখে বিছানার চাদর। পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখে তার গরীবের ঘরখানি। মনের মধ্যে এক বিস্ময় আবিলতা নিয়ে অপেক্ষা করে কাঠের সিঁড়িতে কখন ভেসে আসবে পায়ের শব্দ।

অথবা, আয়নাতে নিজেকেই বারবার দেখতে চাওয়া নিজের যৌবনকে নিজেরই বারবার ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে চাওয়া। বুঝতে চাওয়া, সে সত্যিই কি তাকে চাইছে? তার চোখের দৃষ্টিতে যে নীরব কামনা আছে, তা কি সত্যিই প্রেমের কামনা? এমন কি–ই বা আর দেখতে তাকে...!

অথবা, মোমবাতির আলোয় ফৈজ-এর শায়রী পড়তে পড়তে চা আনার কথা মনে পড়া এবং অন্ধকারে প্রেমিকের সাথে বাজারে যেতে না চেয়ে ঝগড়া করার পরমুহূর্তেই যখন আলো চলে আসে, প্রেমিকের তার চোখের সেই অনন্য চাহনি দিয়ে বলে ওঠা, কুছ অউর হি মাঙ্‌ লিয়া হোতা...

 

এইভাবেই, সিনেমা যত এগোবে... এক এক করে অবেগময় প্রেমজ চাহনি, বেদনার টানাপোড়েন, আর অভিমানময় ছোট ছোট ফ্রেম আপনাকে আস্তে আস্তে ঘিরে ধরতে থাকবে এবং একসময় সিনেমাটা কখন যেন শেষ হয়ে যাবে। মাত্র পয়তাল্লিশ মিনিটেই...

 

সিনেমাটার অসাধারণত্বই হল এর কিছু কিছু মুহূর্ত। মুহূর্তের দৃশ্যেরা এক-একটা সময় আপনার বুকে এসে মাখনের মধ্যে দিয়ে যেন ছুরি চালিয়ে যাবে। কোন দাগ থাকবে নাথাকবে শুধু সুখের মতো ব্যাথা। আর ঘুরে ঘুরে মনের মধ্যে অনুরনণীত হত থাকবে একটাই লাইন, Yaar e man biyaa biyaa..., এসো, বন্ধু এসো...

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে