খোঁজ
আমি তাকে খুঁজি
খুঁজি খুঁজি, খুঁজেই চলি...
যাকে পেলে আমার সব পাওয়া হবে।
যাকে পেলে আমি সব চাওয়া-পাওয়ার বাইরে চলে যাব। ভেতরের এই খোঁজ বাইরেও। নানা মানুষে
তাকে খুঁজি। আমার বাবা, মা, ভাই, প্রেমিক, বন্ধু, আত্মীয়, শিক্ষক, চেনা-অচেনা। কেউ
সে নয়।
এক-এক সময় কাউকে দেখলে মনে হয় এই
কি সেই? বুঝতে পারি না। সময়ের যে বাঁকে তাকে পেয়েছি, অন্য কোন বাঁকে তাকে হারিয়েও
ফেলি একসময়। তার জন্যে কোন পিছুটান থাকে না। থাকে একটা বুক মোচড়ানো কান্না। নীরব
নিঃশব্দ কান্না। যার জন্যে হিমালয় পাহাড় ডিঙ্গোলাম; যার জন্য সাত সমুদ্র এক করে
দিলাম; যার জন্যে মৃত্যুকূপে ঝাঁপ দিয়ে তুলে নিয়ে আনলাম সাত রাজার ধন এক মাণিক,
একদিন সে আমাকে পথের বাঁকে ফেলে হারিয়ে যায়। এক ধূসর কুয়াশায় সে যখন ঢেকে যায় তখন
আর তাকে চিনতে পারি না। বুঝতে পারি, এ সে নয়, সে নয়। সে আছে, অন্য কোথাও, অন্য
কোনখানে।
পথের মাঝে কেউ কেউ হঠাৎ দাঁড়িয়ে
আমার দিকে তাকায়। বলে, তুমিই সেই। তুমিই আমার সেই। পরক্ষণেই তার চোখে আমি যাই
বদলে। যে সুরের হাতছানিতে আমি তার কাছে এসেছিলাম, অন্য সুরের টানে সে দাঁড়ায় অন্য
কারো সামনে। তাকে বলে, তুমিই সেই। তুমিই আমার সেই।
জীবনের কোন সময় থেকে তাকে খুঁজে
চলেছি আমি জানি না। তাকে পাওয়ার পর কি হবে তাও জানি না। আরোও কতদিন ধরে তাকে
খুঁজতে হবে, জানি না। কেবল জানি, শরৎ সন্ধ্যার অস্তগামী সূর্যের আলোতে খুন-খারাপী
রঙের মেঘের আড়াল থেকে সে আমায় ডেকে ডেকে ফিরছে। তার কোলে মাথা রাখতে পারলে আমার
সমস্ত ক্লান্তি, সমস্ত জীবনের শ্রান্তির সমাপ্তি। জীবনের সমস্ত কলরোল, কোলাহল,
কথা, ব্যাথা, অভিমান, প্রেম, অপমান, দুঃখ, আনন্দ, হাহুতাশ --- সবের সমাপ্তি। আমি
জানি একদিন সে আসবে। দাঁড়াবে আমার সামনে। দাঁড়াতেই হবে তাকে। অসীম সুনীল আকাশের
তলায় অগাধ মাঠের মাঝখানে শিশির ভেজা ঘাসের ওপর আমার বুকের আঁচল পেতে দেব। সে বসবে
সেখানে। আর আমি তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বাতাস ঘাসের ঘ্রাণ নিতে নিতে
তাকে বলব, আমি ক্লান্ত। আমায় একটু ঘুমাতে দাও।
Comments
Post a Comment