একটি সিনেমা, একটি ট্রমা
"Time is the death of all things."
প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল যে, যারা RAW মুভি দেখতে অভ্যস্ত নন, তারা এই সিনেমাটা এড়িয়ে যান,
অতি অবশ্যই এড়িয়ে যান। অনুরোধ করছি। কারণ দেখতে গেলে পস্তাবেন। এবং
সিনেমাটার সঙ্গে Injustice হবে।
ঘৃণ্য, বিকৃত, পার্ভার্ট সত্যের
একটা সহাবস্থান আছে আমাদের এই পৃথিবীতে সুস্থ, সরল সুন্দরের
পাশাপাশি। চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রথমে দেখান লেখক ফিওদর দস্তয়েভস্কি (সম্ভবত)। তারপর দলে দলে অনেক মানুষ এগিয়ে আসেন। অনেক অনেক এমন সব বিষয়
শিল্পের আঙ্গিনায় পা রাখে, যা থেকে সাধারণ মানুষ সাধারণত মুখ সরিয়ে নেন। সত্য তবু থেকেই যায়।
আচ্ছা, আপনার কি
মাথা ঘোরার অভ্যাস আছে? থাকলে এই সিনেমা দেখবেন না। প্রথম
পনেরো মিনিট যেভাবে ক্যামেরা ঘুরেছে তাতে মাথা এবং সারা শরীর গোলাতে বাধ্য। সেখান
থেকেও যদি বেঁচে যান, তাহলে একটি QUEER তথা বিকৃতকাম
প্রস্টিটিউটের মধ্যে ক্যামেরা যখন ঘুরবে, একটা হত্যাদৃশ্যকে যখন সরাসরি দেখানো হবে, একটা
বিকৃত, যন্ত্রণাদায়ক ধর্ষণের দৃশ্য এবং তারপর যন্ত্রণা দিয়ে
হত্যাদৃশ্য যখন দেখানো হবে, এবং এগুলো দেখানো ততক্ষণ ধরেই
যতক্ষণ সাধারণ নিয়মে হতে সময় নেয়, তাহলে কিন্তু আপনি অসুস্থ
বোধ করবেন। এবং একটা সময় ঘটনাবলীর এই কোলাজে সিনেমা মাঝপর্বে এসে থামবে।
গল্পটা হলঃ ঘটনাচক্রে একটি মেয়ে বীভৎসভাবে রেপ হবে, তারপর তাকে মেঝেতে মাথা ঠুকে ঠুকে হত্যা করা হবে। এই
মেয়েটির ভূমিকায় আছে মণিকা বেলুচি। তার হত্যার প্রতিশোধ নেয় তার প্রাক্তন প্রেমিক
(ভিনসেন্ট ক্যাসেল) এবং বর্তমান প্রেমিক (এলবার্ট ডুপন্টেল)।
ব্যাস। এর বেশি কিছু নেই। তাহলে সিনেমাটার কথা বলছি কেন? গ্যাসপার নোই নামী পরিচালক। এই সিনেমায় তিনি বীভৎস
পরিচালক। প্রথমার্ধের বীভৎসতা আপনাকে ট্রমাটাইজ্ড করতে পারে কোথাও। আস্তে আস্তে
সিনেমার পরবর্তী অংশে যখন তিনি নিয়ে যান যখন দেখা যায় সিনেমা সুন্দর হতে শুরু
করেছে একটু একটু করে। শারীরী প্রেম কীভাবে মানবিক এবং আত্মিক সৌন্দর্যে উন্নীত
হচ্ছে। এবং এই মধুর পৃথিবী দিয়েই যখন সিনেমা শেষ হচ্ছে, তখন
আপনার সামনে দুই অর্ধের দুই বৈপরীত্য নিয়ে মানুষের অবস্থানটাই তিনটে সাংঘাতিক
শব্দে এসে যেন শেষ হবে --- অসম্ভব, কিন্তু IRREVERSIBLE
আর্জেন্টিনার পরিচালক নাম দেখানো থেকে শুরু করে, ক্যামেরা থেকে শুরু করে, সাউন্ড
থেকে শুরু করে, অভিনয় পর্যন্ত --- এমন মর্মান্তিক উপস্থাপনা
করেছেন যে, বারবার সিনেমাটাকে উলটো প্রেক্ষিতে দেখতে ইচ্ছে
হবে, কিন্তু আপনি জানেন, উল্টানো যাবে
না। মানে IRREVERSIBLE
সিনেমাটা দেখতে পারেন একটাই কারণে। প্রথমার্ধ আর দ্বিতীয়ার্ধের চরম
দুটো বৈপরীত্যকে যতটা বাস্তবসম্মতভাবে অনুভব করানো সম্ভব তা প্রতিষ্ঠা করার
চেষ্টার কারণে। এরকম সিনেমা আমি জীবনে
দেখিনি, জীবদ্দশায় আর দেখতেও চাই না। কিন্তু এমনটা তো হয়েই থাকে। গত কয়েক বছরে ভারতবর্ষেই এমন এক-একটা ঘটনা ঘটেছে যে আমরা শিউরে উঠেছি, মনে হয়েছে এমন ঘটনা ঘটানো মানুষের পক্ষে সম্ভব! কিন্তু উত্তর, হ্যাঁ সম্ভব। সেটাই তো ঘটেছে! এবং
সেই সম্ভব-অসম্ভবের ট্রমার মধ্যে দিয়ে এই
সিনেমা এগিয়েছে। এবং যখন শেষ হয়েছে, সেই ট্রমা আপনার সাথে সাথে ঘুরেছে, ঘুরবে, ঘুরেই চলবে --- IRREVERSIBLE
এবং সবশেষে পড়ে থাকবে শুরুর কথাটা --- "Time is the death of all things."
Comments
Post a Comment