পেয়ালায় তুফান
মানুষ কি হয়েছে, এটা বড় কথা, না কি হতে চেয়েছিল, সেটা বড়ো কথা?
হতে
চাওয়া আর হওয়ার মধ্যে যে লক্ষ-যোজন দূরত্ব আছে, তারই বা হিসাব কে রাখে?
সংসার
আর কর্ম --- এই দুটোর মধ্যে নিহিত থাকে এর উত্তর। যে উত্তর বেশিরভাগ মানুষই দিতে
পারে না।
যে
মানুষের মধ্যে আছে শিল্পসত্ত্বা, যার প্রকাশেই সে নিজেকে সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত
ভাবে, সে কি সংসারের সাধারণ দৈনন্দিন কাজে-কর্মে নিজেকে প্রকাশিত করার আনন্দে মেতে
থাকতে পারে?
না
মনে হয়। তাকে বারবার ফিরে যেতে হবে তার শিল্পসত্ত্বার আঙ্গিনায়।
আর
এখানেই সংঘর্ষ। অবধারিত। অবশ্যম্ভাবি।
সেখান
থেকেই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে কি চায় --- এই মুহূর্তে।
ভারতীয়
সমাজে ছেলেদের পক্ষে হয়তো বা কোথাও এই দুটোকে একসঙ্গে নিয়ে চলা তুলনামূলক সহজ।
কিন্তু মেয়েদের পক্ষে? ভীষণ কঠিন।
তবুও
অনেক মেয়ে চেষ্টা চালিয়ে যায়। কেউ এগোতে পারে। কেউ পিছিয়ে যায়। কেউ থেমে যায়।
‘ভালোবাসা’
শব্দটা ভুল-ভুলাইয়ার মতো। এমন এক গোলকধাঁধা, যা দিয়ে বেঁধে ফেলা যায় মানুষের
চেতনাকে, মানুষের কর্মক্ষমতাকে। এই একটা শব্দে একজন লেখিকাকে অবশেষে তার লেখার
থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হয় তার প্রেমকে। ফলে শিল্পসত্ত্বার ওপর ভালোবাসা ডোমিনেট
করে জিতে যায়। তাকে যে জিততেই হবে। নইলে সংসার চালানোই দায়!
মানুষ
বাঁচে ভালোবাসায়। শিল্পসত্ত্বায় নয়।
যদি
প্রশ্ন করো, শিল্পসত্ত্বার প্রতি ভালোবাসাটার তা হলে কি হল?
কোন
উত্তর নেই। থাকে না। আফটার অল, মানুষ সামাজিক জীব। একা বাঁচা যায় না। একা বাঁচতে
পারে না বেশিরভাগ মানুষই। যারা পেরেছে, তাদের সৃষ্টিকে বুকে ধরে নিয়ে বেঁচে থাকি
আমরা। যারা পারে নি, তারা সমাজের জটিল গোলকধাঁধায় কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
নুপুর
আস্থানার ‘কাটিং চায়ে’ দেখতে দেখতে এই কথাগুলোই মনে হচ্ছিল। অবশেষে ভালবাসারই জয় হল।
কারণ, সারভাইভ করতে হলে তো মেনে নিতেই হয়। এই মেনে নেওয়া থেকেই শুরু হয় নিজেকে
বিকাশ করার ইচ্ছেকে ডমিনেট করে সুখী সংসারের জয়।
আরশাদ
ওয়ারসি আর চিত্রাঙ্গদা সিং অসাধারণ অভিনয় করেছেন এই অংশটিতে। মিতা বশিষ্ঠ যদি এক
মিনিটও কোথাও অভিনয় করেন সেটাও যথেষ্ট। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে হয় তার অভিনয়শৈলী। সব
মিলিয়ে এই সিনেমাটা মন ছুঁয়ে গেল। যদিও এটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত, তবুও,
আমার মনে হয়, এই বিতর্ক আবহমানকালের, এবং, এই বিতর্ক কোথাও গল্পটার পরিসমাপ্তিকে
মন খারাপে রূপান্তরিত করে, অন্তত আমাকে।
Comments
Post a Comment