একটি আষাড়ে গল্পের মহাপরিণতি
আমার মেয়েবেলায় স্কুলে
কিছু উঠতি লেখক/লেখিকা ছিল। তারা গল্প লিখত। আমরা
উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করতাম। লেখা শেষ হলে আমাদের হাতে হাতে ঘুরত গল্পগুলো। আমরা
অভিভূত এমন সৃষ্টিশিল্পে। কয়েকটা প্লট এখনও মনে পড়ে ---
উদারহন ১ --- নায়ক
মফস্বলের স্কুলে পড়ে। পড়াশোনায় খুব ভাল। নায়িকাকে সরস্বতী পূজোয় দেখে প্রেমে মত্ত
হয়। নায়িকা পাত্তা দেয় না। নায়ক গরীব। নায়িকা বড়লোক। তবুও নায়িকার জন্যে জান
লড়িয়ে দেয় নায়ক। তার
অনুপস্থিতিতে স্কুলের নোট্স জোগাড় করে দেয়। নায়িকাকে কেউ বিরক্ত করলে তাকে
আচ্ছাসে পিটান দেয়। নায়িকা কিছুই জানতে পারে না। বরং দেখা হলে নায়ককে হেনস্থা করে
নানাভাবে। পরে একদিন নায়ক অর্থাভাবে স্কুল ছেড়ে সাইকেলের দোকানে কাজ নেয়। নায়িকা
তখন জানতে পারে নায়কের বন্ধুদের কাছ থেকে আসল ঘটনা। নায়ক তাকে কতরকমভাবে সাহায্য
করেছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। অতঃপর বাবাকে বলে নায়িকা নায়ককে স্কুলে আবার পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনে। মধুরণ
সমাপয়েৎ।
উদাহরণ ২ --- নায়ক
ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে পড়ে। নায়িকাকে দেখে লুতুপুতু প্রেমে পাগল। নায়িকা অতি দুঃখী।
কেন? কেউ জানে না! সে কারো সাথে কথা বলে না। কোন বন্ধু নেই। একা থাকে। শেষে নায়ক
নায়িকার ঠিকানা জোগাড় করে তাদের বাড়ী যায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারে নায়িকার প্রিয়
বন্ধু তার প্রেমে পাগল হয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাই এখন নায়িকা নিজেকে দোষী ভাবে আর সেই
দুঃখে একা থাকে। এরপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নায়ক নায়িকাকে স্বাভাবিক করে তোলে। এক্ষেত্রে আবার দুই পক্ষের বাবা-মা
সাহায্য করেছিল নায়ককে। তারপর? অ ল মি তি।
উদাহরণ ৩ --- নায়িকা
এবার নায়কের প্রেমে পড়ে। এরাও স্কুলে পড়ে। নায়ক অনেক বান্ধবী নিয়ে ব্যস্ত, মানে
শশকের ন্যায় ব্যস্ত আর কি।
তো এই নায়িকা নায়কের জন্যে জীবনপণ করেছে। ফলে তাকে সবক্ষেত্রে সাহায্য করে। নায়কের
তা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। সে উচ্ছ্বল জীবনে ব্যস্ত। নায়িকার খুব অভিমান হয়। সে
আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পড়ে। জানা যায় তার একটা শক্ত রোগ হয়েছে। অপারেশান করতে
হবে। তাতে সে বাঁচতেও পারে, না-ও বাঁচতে পারে। নায়কের এবার হুঁশ হয়। সে বুঝতে পারে
নায়িকা তাকে কত ভালবাসে। সে সারাদিন (স্কুল ছেড়ে) নায়িকার বেডের পাশে বসে থাকে।
নায়িকা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে থাকে। অপারেশান সাকসেসফুল হয়। অতঃপর? আমার
কথাটি ফুরালো।
এসব
কথা কেন বলছি? ভাইয়ের
পাল্লায় পড়ে সিনেমা দেখতে বসেছিলাম। প্রভাস আর পূজা হেগড়ে-র ‘রাধে শ্যাম’। সিনেমাটা
দেখছিলাম আর এইসব গল্পগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল। পূজা খুবই টুকটুকে সুন্দরী, প্রভাস
এখানে নস্ত্রাদামুস অফ ইন্ডিয়া হয়েছে। পূজার জীবনের আর কয়েকটা মাস আছে। প্রভাস
বলছে, না, আমি যখন বলছি পূজা বাঁচবে, তো সে বাঁচবে। এই নিয়ে পূজার ডাক্তার কাকার সাথে কি
তুল্যমুল্য লড়াই! মানে বিজ্ঞান বনাম জ্যোতিষচর্চার। মানে প্রেম বনাম বিজ্ঞানের।
তারপর সে কি হল, ঠাহর করার আগেই দেখলাম প্রভাস জাহাজের মাথায়। সে কী সুনামি রে
বাবা!!!
মা এই সময় কি একটা কাজে ঢুকেছিলেন। আমাদের একসাথে বসে সিনেমা
দেখতে দেখে থমকে গেলেন। আমাদের দুজনের এমন সহাবস্থান বিরল। কি ব্যাপার? তিনি একঝলক
স্ক্রীনের দিকে তাকালেন। প্রভাস তখন জাহাজের মাথায় চড়ে লাইট ফায়ার করছে। মা তা দেখে সরলমনে জিজ্ঞাসা
করলেন, তোরা কি ‘টাইটানিক’ দেখছিস?
আমি আর থাকতে পারলাম না। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁপতে থাকলাম। ভাই
কটমট করে মায়ের দিকে তাকাল। তারপর একটাও কথা না বলে আবার সিনেমায় মনোনিবেশ করল।
Comments
Post a Comment