এই যে আমি, এই...
“কয়েকদিন ধরে একটা কথা ভাবছিলাম। তোকে সেটা বলি। খুব সিরিয়াস”, বলল পল্লবী। অনেকদিন পর ওর সাথে দেখা। সে বিয়ে করবে সম্প্রতি। কার্ড হাতে করে নেমন্তন্ন করতে এসেছে। সে বলতে শুরু করল,
মেসেঞ্জারে
অনেকেই আমাকে পিং করে। বেশিরভাগেরই একই ধরণের প্রশ্ন, কি করছ? কোথায় থাকো? কি পড়ছ?
সঠিক উত্তর আমি কোনদিনই দিই নি, একমাত্র তাদের বাদে, যাদের সাথে বন্ধুত্ব খানিকটা
গভীর হয়েছে। অনেকে আছে, যারা ‘hi’ বলেই
বন্ধুত্ব করে ফেলতে চায়। তারা আমাকে তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে, এবং আশা করে আমাদের মধ্যে কোন দুরত্ব থাকবে না। তারা
আবার শুরু করে, খেয়েছ? কি খেলে আজকে? ডিনার হয়েছে? এত রাতে জেগে থাকলে ঘুমাবে কখন?
শরীর খারাপ করবে তো!
আমি
ভাবছিলাম, এইসব ফেসবুক বন্ধুরা আমাকে ঠিক কি মনে করছে? উত্তরটা খুবই সাধারণ।
গড়পড়তা আর পাঁচটা বাঙালী মেয়ে। সাধারণ বাঙালী মেয়ে। এই সাধারণ বাঙালী মেয়েরা কি
করবে? প্রায় প্রতিদিনিই নিজের ছবি বিভিন্ন ভঙ্গিমায় দিয়ে পোস্ট করবে। কোন
রেস্টুরেন্টে গেলে কিম্বা ভালো খাবার বানালে তার ছবি দেবে, মাঝে মাঝে সুন্দর
সুন্দর কোটেশান পোস্ট করবে, যার বেশিরভাগই ইমোশনাল রোমান্টিক মুডের। আর বিশেষত যে
মেয়েরা রাতের দিকে অনলাইন থাকে, তারা একটু অন্যরকম, তারা সিগনাল দিচ্ছে, আমি ভয়েস
কলের জন্য রেডী।
তবে
সবাই তাই করে না। কিন্তু অনেক মানুষের মতিগতি এরকম দেখছি। এর থেকেও খারাপ ব্যাপার,
একটা মেয়ে প্রেমের গল্প লিখবে।
তা না, কেন আঁতেল পোস্ট? আর আঁতলামো যদি করবিই তাহলে হাতাকাটা গেঞ্জী পরে
সিগারেট মুখে ড্রামের কাঠি হাতে নিয়ে পোস্ট দে না। কানের ডগা ফুটো করা, চুল
এলোমেলো করা, কাঁধে ট্যাটু করা ছবি ছাড়। তাহলে মনে হবে, যে না, এ মেয়ে আঁতেল। একে
ছোঁয়া যায় না।
অথবা
মেয়েরা বিউটি প্রোডাক্টের ছবি দেবে। বুটিকের শাড়ীর ছবি দেবে। সস্তার গয়নার ছবি দেবে। সেগুলো কিনতে বলবে। সেগুলো নিয়ে
আলোচনা হবে।
স্বামী-সন্তান সহযোগে বেড়ানোর ছবি দেবে। মেসেঞ্জারে নিজের ব্রেস্টের সাইজ, পেটের
ভুঁড়ি আর স্বামীর মধুর আচরণ নিয়ে রহস্যময় বার্তালাপ করবে। সিরিয়াল নিয়ে কথা বলবে।
‘হইচই’য়ের ওয়েব সিরিজগুলো নিয়ে তুমুল উত্তেজনা সহকারে রসিয়ে রসিয়ে আলোচনা করবে।
কেন
রে? এর বাইরে স্বাভাবিক জিনিস নিয়ে কথা বলা যায় না? চিন্তার খোরাক কি পুরুষগুলোর
হাতে? আমি তো কতকিছু ভাবি। কালকেই একটা বই পড়লাম, ঈশ্বর যখন বন্দী। কি দারুন বই রে! এ নিয়ে আলোচনা
করবে কেউ? মোটেই না। ছেলেগুলোর
ধরণ সবকটারই প্রায় এক...
“এই
তো! তুই আবার নারীবাদী হয়ে যাচ্ছিস।” আমি বললাম।
“ভাগ...
তুই না বড্ড বাজে বকিস। আমি কথাগুলো কি ভুল বললাম বল? এই তো আগের দিনই অঞ্জনের (ওর
হবু বর) সাথে কথা হচ্ছিল। ওর মা না কি সিনেমার পোকা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কি
সিনেমা দেখে? ও বলল, প্রসেনিজতের একটা বইও ছাড়ে না। চিরঞ্জীত আর তাপস পালও প্রিয়।
আমি বললাম, এ বাবা! কী ব্যকডেটেড! আসলে কি জানিস, তোকে বলি, আমার শাশুড়ীটা কেমন
যেন। একটু হাবাগোবা দেখে মনে হলেও মিচকে শয়তান আছে। এই সিনেমা আর সিরিয়ালগুলো দেখে
দেখে এমন হয়েছে। আমি ঢুকি একবার। ওগুলো সব ছাড়াব। সুস্থ রুচি দেওয়া খুব দরকার।
বাচ্চা তো হবে একদিন না একদিন। কিন্তু
তার আগে পরিবেশ তৈরী করতে হবে না? তো হল কি শোন না, সেদিন আমার কানের দুল দেখে বলল
জানিস? দুলটা কি...”
আমি
দীর্ঘনিঃশ্বাস চেপে শুনতে লাগলাম। বাঙালী মেয়ে কেমন হওয়া উচিৎ তা আমার সামনে বসে
আছে। উদাহরণের কোন প্রয়োজন নেই। আর বাঙালী পুরুষ কেমন হয়? তারাও পল্লবীর মেসেঞ্জারে লাইন দিয়ে রয়েছে। এতএব...
===================
বিঃ দ্রঃ যাই হোক না কেন, বরাবরের মতো পল্লবীকে সেদিনও খুব সুন্দর লাগছিল। ও দেখতে বড় সুন্দর। বাঙালী মেয়েদের এই গুণটা এক তামিল ছাড়া আর কোথাও তো তেমন চোখে পড়ল না। তবে পল্লবীর নেমন্তন্নটা বোধহয় মার গেল। এই পোস্টটার পর ও ফোন করল বলে...
Comments
Post a Comment