দোহাই তোদের

 



"দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর্‌,

ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর!"

সবার মাঝে তুমি থাকলে আমার কেন এমন হয়? মনে হয়, আঁচলের তলায় টুক্‌ করে তোমাকে লুকিয়ে নিই, তারপর আস্তে করে সকলের অগোচরে তোমায় নিয়ে চলে যাই অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে। অথচ, একলাটি যখন তোমার সাথে পথ হাটি তখন কিন্তু কোন কথা যোগায় না। মনে হয় যেন এই পথ অন্তহীন হোক। নীরবতা আমাদের ঘিরে ঘিরে চলুক। তোমায় দেখব না, কিন্তু তোমার পায়ের আওয়াজ আমার সাথে সাথে চলবে। তোমার গায়ের গন্ধ মাঝে মাঝে ফুলের গন্ধের সাথে সাথে আমার শাড়ীর ভাজে ভাজে জড়িয়ে থাকবে। আর তোমার চকিত স্পর্শ আমাকে জানিয়ে যাবে, তুমি আছ, আমার কাছেই আছ।

আমার মনে হয় আমি দিগ্বিজয় করতে পারি। আমি গোটা একটা পৃথিবী ছিনিয়ে আনতে পারি তোমার জন্য। সব কামুকীদের শেষ করে দিতে পারি। যারা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেষে, তারা আমার দিকে তাকালেই শিহরিত হয়ে বলবে, ‘ত্রাহিমাং!’

এই কি প্রেম? কে জানে। সঙ্গে থাকলে তুমি বিরক্তিকর, বোকা, মাথামোটা, আবোল তাবোল বকে বকে আমার মাথা ধরিয়ে দাও। আবার না থাকলে আমি নিজেই নিজের মাথা ঠুকি, কেন আমার মাথা ধরছে না এখন।

মাঝে মাঝে আমার শরীর খারাপ করে। জ্বর আসে। সে জ্বর ছাড়তে চায় না। মনে হয় তোমার শীতল শরীরে শরীর না মেলালে এ জ্বরের আগুণ জুড়াবে না। আচ্ছা, এতবছর ধরে তো তোমাকে দেখছি, কিন্তু সবার মাঝে থাকলে আমি তোমায় আশ মিটিয়ে দেখি, এত বছর পরেও। দেখেও যেন দেখা ফুরায় না। মনে হয় আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। আমি কিছুক্ষণ পর মরে যাব। তার আগে একবার খালি দেখে নিই তোমাকে, প্রাণভরে।

অনেকবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছি নিজেকে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। তবু নিজের কাছে নিজে অনেক অচেনা। অথচ তুমি যখন আমায় দেখে বলো, বাঃ! টিপটাতে তোকে বেশ মানিয়েছে তো! মনে হয়, কই আয়নায় দেখে মনে হয়েছিল চাড়াল চন্ডালের মতন লাগছে আমাকে। রাগ হয়, এই কালারের টিপ তো এই একটাই। সারা বাজার উজাড় করে খুঁজে আনতে ইচ্ছে হয় এমন টিপের একটা পাতা।

আমি জানি, মাঝে মাঝে তোমার হাত স্পর্শ করে যায় আমায়। শিহরণ জাগে। ট্রেনে-বাসে ভীড়ের মধ্যে কতবার আমার কোমর জড়িয়ে ধরে নিরাপদ জায়গা করে দিয়েছ আমাকে তোমার বুকের মাঝে। তখন তোমার নিঃশ্বাস আমার কাধে, ঘাড়ে। সে নিঃশ্বাসের বিষে মনে হয়েছে, এবার মরে যাই। বেঁচে থাকা তো অনেক হল। এবার মরে যাওয়ার সুখটাকে চেটেপুটে খাই।

তোমার অনেক কাজ, অনেক লড়াই, অনেক সংগ্রাম। সেখানে আমি কোথাও নেই। থাকব বিশ্রামের ক্ষণটুকুতে। সেটুকুই যথেষ্ট। আমার বুকে মাথা রেখে যদি দুদণ্ড ঘুমাতে পারো তাহলেই যথেষ্ট। সেখানেই আমার সমস্তটা। এর বেশি কোন দাবী নেই। আমি তোমাকে দাবী করি না। কারণ, আমার সৃষ্টিতে, আমার আনন্দে, আমার বেদনায় তুমি নেই। তুমি কোথাও কোনদিন ছিলে না। ছিল এমন এক স্বত্ত্বা, যে আমার জন্মলগ্ন থেকে আমাকে দেখছে। সেই স্বত্ত্বাকে আমি মাঝে মাঝে খুঁজে পাই তোমার মধ্যে। তখন আমি পূর্ণ, তোমাতে পূর্ণ। তুমি ভালো থেকো, আমি ভাল থাকব।

 

-------

 

বিঃ দ্রঃ – পুরোটা শোনার পর আমার হতভাগা হাই তুলতে তুলতে বলল, এসব আবোল তাবোল লেখা ছাড়া কি তোর আর কোন কাজ নেই? বাড়ীতে বসে বসে মাথাটা বিগড়ে যাচ্ছে। কিছু রান্না শেখ, ভবিষ্যতে কাজে দেবে।

 

--------

 

ছবিঃ Tousif Haque

 

প্রথম লাইনটা রবীন্দ্রনাথ থেকে টুকেছি... আশা করি উনি কিছু মনে করবেন না।

 

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে